স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলেই খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সম্পর্কে বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ছিল একটি অস্থায়ী বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে 1971 সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীর মনোবলকে উদ্দীপ্ত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রথম সম্প্রচার 1971 সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে হয়েছিল। এই সম্প্রচারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ সম্প্রচার করা হয়েছিল। বেতার কেন্দ্রটি প্রতিদিন দুটি অধিবেশনে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করত। সকালে ৬টা থেকে ৮টা এবং বিকেলে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হত। এর মধ্যে ছিলো সংবাদ, দেশাত্মবোধক গান, কথিকা, নাটক, কবিতা, ইত্যাদি। বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানগুলো ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন আব্দুল হাই মামুন। বেতার কেন্দ্রের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন কামাল লোহানী। বেতার কেন্দ্রে কাজ করতেন অনেক তরুণ সৃষ্টিশীল মানুষ। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, আবদুল গাফফার চৌধুরী, রণেশ দাশগুপ্ত, সুভাষ দত্ত, সুব্রত রায়, ইকবাল বারী, ইকবাল বারী চৌধুরী, ফররুখ আহমেদ, সুফিয়া কামাল, আব্দুল জব্বার, খালেদা জরিনা, সাবিনা ইয়াসমিন, আব্দুল মালেক, লতা মঙ্গেশকর, প্রমুখ।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানগুলো মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলকে উদ্দীপ্ত করে তাদেরকে সাহস যুগিয়েছিল। এছাড়াও, এটি বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অবগত করে এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সহায়তা করেছিল।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি মুক্তিযুদ্ধের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র

স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের নাম কি?

স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের নাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এই বেতার কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৬ মার্চ দুপুরে এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাটি এই বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেন। ২৮ মার্চ থেকে এই বেতার কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের খবর, মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনা, যুদ্ধক্ষেত্রের সাফল্যকাহিনী, মুক্তিযুদ্ধের গান ইত্যাদি প্রচার করা হতো। এই বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীর মনোবলকে উদ্দীপ্ত করা হয়েছিল।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চরমপত্র পাঠ করেন কে?

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চরমপত্র পাঠ করেন এম আর আখতার মুকুল। তিনি একজন বাংলাদেশী কবি, নাট্যকার, সাংবাদিক ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগীতশিল্পী। তিনি ১৯৩৫ সালের ১লা আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।

চরমপত্র ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে এম আর আখতার মুকুল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করতেন। তিনি পাকিস্তানি সেনাদেরকে “পাকিস্তানি দস্যু” বলে আখ্যায়িত করতেন। চরমপত্রের মাধ্যমে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীর মনোবলকে উদ্দীপ্ত করতেন।

চরমপত্র অনুষ্ঠানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হওয়ার দিন ২৫শে মার্চ থেকে শুরু করে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দিন পর্যন্ত প্রতিদিন প্রচারিত হয়েছিল।

চরমপত্র কি

চরমপত্র ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হওয়ার দিন ২৫শে মার্চ থেকে শুরু করে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দিন পর্যন্ত প্রতিদিন প্রচারিত হয়েছিল।

চরমপত্র অনুষ্ঠানটি রচনা ও উপস্থাপনা করেছিলেন বাংলাদেশী কবি, নাট্যকার, সাংবাদিক ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগীতশিল্পী এম আর আখতার মুকুল

চরমপত্র ছিল একটি ব্যাঙ্গাত্মক ও শ্লেষাত্মক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে এম আর আখতার মুকুল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করতেন। তিনি পাকিস্তানি সেনাদেরকে “পাকিস্তানি দস্যু” বলে আখ্যায়িত করতেন। চরমপত্রের মাধ্যমে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীর মনোবলকে উদ্দীপ্ত করতেন।

চরমপত্র অনুষ্ঠানের কিছু বিখ্যাত উক্তি হলো:

    • “পাকিস্তানি দস্যুরা, তোমরা আর কতদিন লুটপাট করবে? তোমরা আর কতদিন আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করবে? তোমরা আর কতদিন আমাদের ঘর-বাড়ি জ্বালাবে? আমরা তোমাদেরকে শেষ করে দেব।”
    • “মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা, তোমরা সাহস হারাবে না। তোমরা লড়াই চালিয়ে যাবে। তোমরা পাকিস্তানি দস্যুদেরকে পরাজিত করবে।”
    • “বাঙালি জাতি, তোমরা জেগে উঠো। তোমরা ঐক্যবদ্ধ হও। তোমরা পাকিস্তানি দস্যুদেরকে পরাজিত করে তোমাদের স্বাধীনতা অর্জন করো।”

চরমপত্র অনুষ্ঠানটি মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীর মনোবলকে উদ্দীপ্ত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা

কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা

২৬ মার্চ, ১৯৭১

সন্ধ্যা ৭:৪০

এম এ হান্নান

**আমি, এম এ হান্নান, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করছি যে, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। এই মহান স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে আমাদের বহু বছরের সংগ্রাম। আজ সেই সংগ্রামের ফলশ্রুতি আমরা পেতে চলেছি।

আজ থেকে পাকিস্তানের শাসন আমাদের উপর আর থাকবে না। আমরা আমাদের নিজস্ব সরকার গঠন করব। এই সরকারের প্রধান হবেন আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আমি, এম এ হান্নান, আপনাদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যে, এই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করুন। শত্রুকে পরাজিত করে আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখব।

জয় বাংলা।**

২৭ মার্চ, ১৯৭১

সন্ধ্যা ৭:৪০

মেজর জিয়াউর রহমান

**শুনুন, শুনুন, শুনুন,

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হইয়াছে।

আজ থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র।

পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আজ রাতে আমাদের বাঙালি জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করতে চায়। তারা আমাদেরকে হত্যা করতে চায়। তারা আমাদেরকে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে চায়।

কিন্তু আমরা বাঙালিরা স্বাধীনতা চাই। আমরা স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে জীবন দিতে রাজি আছি।

আমরা পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। আমরা তাদেরকে পরাজিত করব। আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করব।

জয় বাংলা।**

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র

এই ঘোষণাগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল। এই ঘোষণাগুলোর মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করার সংকল্প ঘোষণা করেছিল।

এই ঘোষণাগুলোর গুরুত্ব

  • এই ঘোষণাগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।
  • এই ঘোষণাগুলোর মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করার সংকল্প ঘোষণা করেছিল।
  • এই ঘোষণাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
  • এই ঘোষণাগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিচালিত একটি বেতার কেন্দ্র। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে সম্প্রচারিত হয়েছিল। বেতার কেন্দ্রটি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জোগানো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গানগুলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এসব গান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জোগানো এবং জনসাধারণের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত কিছু জনপ্রিয় গান হলো:

  • শোনো একটি মুজিবরের থেকে
  • রক্ত দিয়ে নাম লেখা
  • বিজয়ের গান
  • এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
  • সোনার বাংলা
  • আমার সোনার বাংলা
  • রণসঙ্গীত
  • মাগো তোমার পুত্রের রক্তে

এই গানগুলোর কথা ও সুর ছিল অত্যন্ত উজ্জীবনী ও অনুপ্রেরণাদায়ক। এসব গানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের লড়াইয়ের শক্তি ও সাহস পেতেন। এসব গান জনসাধারণের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত করে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেছিল।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গানগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ। এসব গান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিকে অমর করে রেখেছে।

জল্লাদের দরবার

Leave a Comment