তৃতীয় অধ্যায়ঃ মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন

আমরা দ্বিতীয় অধ্যায়ে পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে জেনেছি, এখন আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন সম্পর্কে জানবো।

ইলেকট্রন বিন্যাস, অবস্থান্তর মৌলসমূহের ধর্মাবলি ইলেকট্রন বিন্যাসের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে মৌল, ক্ষার ধাতু, পর্যায়বৃত্ততা, পুনরাবৃত্তি ঘটে। এ কারণে মৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাসভিত্তিক পরিবর্তনশীল আয়নীকরণ শক্তি, ইলেকট্রন আসক্তি, ধর্মসমূহকে পর্যায়বৃত্ত বা পর্যায়ভিত্তিক ধর্ম বলা হয়। আয়নীকরণ শক্তি ও তড়িৎ ঋণাত্মকতা, অক্সাইডের pH ইলেকট্রন আসক্তির ওপর নির্ভর করে ধাতু ও অধাতুর মধ্যে আয়নিক বন্ধন, পর্যায়বৃত্ততা, অরবিটাল সংকরণ, সিগমা ও অধাতুর পরমাণুর মধ্যে সমযোজী বন্ধন ঘটে।

আবার আয়নিক যৌগে পাই বন্ধন, অণুর আকৃতি, মুক্তজোড় পোলারায়ন ও সমযোজী অণুতে পোলারিটি সৃষ্টির ফলে উভয় শ্রেণির যৌগের ইলেকট্রন, সন্নিবেশ বন্ধন, পোলারায়ন, মধ্যে বিপরীত মিশ্র রাসায়নিক ধর্মাবলি প্রকাশ পায়। বিভিন্ন শ্রেণি বা গ্রুপের ডাইপোল, ভ্যানডার ওয়ালস বল, মৌল ও তাদের যৌগের মধ্যে এসব বৈশিষ্ট্য আমরা গভীর আগ্রহসহকারে ধাপে H বন্ধন, H বন্ধনের গুরুত্ব, অজৈব যৌগের নামকরণে IUPAC পদ্ধতি । মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন ধাপে লক্ষ করবো।

  • পারমাণবিক ব্যাসার্ধ – AEN > 1.7
  • পোলার সমযোগী – AEN, 0.4-1.7

মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন

মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন

৮. অরবিটাল অধিক্রমণের ভিত্তিতে সমযোজী বন্ধনের শ্রেণিবিভাগ ব্যাখ্যা করতে পারবে।

৯. অরবিটালের সংকরণের ধারণা ও সংকর অরবিটালের প্রকারভেদ ব্যাখ্যা করতে পারবে।

১০. সংকর অরবিটালের সাথে সমযোজী যৌগের আকৃতির সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারবে।

১১. অণুর আকৃতি ও বন্ধন কোণের ওপর মুক্তজোড় ইলেকট্রনের প্রভাব ব্যাখ্যা করতে পারবে।

১২. ছোট ছোট গোল আলু ব্যবহার করে ‘হাতে কলমে’ বিভিন্ন যৌগের মডেল তৈরি করে দেখাতে পারবে।

১৩. সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধনের গঠন কৌশল ব্যাখ্যা করতে পারবে।

১৪. সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধন সমযোজী বন্ধনের একটি রূপ তা প্রমাণ করতে পারবে।

১৫. আয়নিক যৌগের সমযোজী বৈশিষ্ট্য ফাজানের সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে পারবে।

১৬. ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে পানির ডাইপোলের উপস্থিতি প্রমাণ করতে পারবে।

১৭. ভ্যানডার ওয়ালস বল ব্যাখ্যা করতে পারবে ।

১৮. হাইড্রোজেন বন্ধন গঠন ব্যাখ্যা করতে পারবে।

১৯. H2O তরল হলেও H2S গ্যাস এর কারণ বিশ্লেষণ করতে পারবে।

২০. জীবজগতের টিকে থাকার জন্য হাইড্রোজেন বন্ধনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে।

২১. অজৈব যৌগের নামকরণ করতে পারবে।

৩.১ ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে মৌলের শ্রেণিবিভাগ(Classification of Elements based on Electronic Configuration)

আমরা জানি ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম মেন্ডেলিফ জ্ঞাত ৬৩টি মৌলকে এদের পারমাণবিক ভরের ক্রম বৃদ্ধি অনুসারে ১২টি পর্যায় ও ৮টি গ্রুপে বিন্যস্তসহকারে প্রথম পর্যায় সারণি তৈরি করেন। পরবর্তীতে পারমাণবিক সংখ্যার ক্রম অনুসারে মৌলসমূহকে ৭টি পর্যায় ও ১৮টি গ্রুপে বিন্যস্ত করে আধুনিক পর্যায় সূত্র মতে দীর্ঘাকার পর্যায় সারণি তৈরি করা হয় ।

আধুনিক পর্যায় সূত্র : আধুনিক পর্যায় সূত্র মতে, “মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি এদের পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।”

আধুনিক পর্যায় সারণি তৈরিতে অনেক বিজ্ঞানীর মধ্যে বোর (Bohr)-এর অবদান সবচেয়ে বেশি হওয়ায় দীর্ঘাকার পর্যায় সারণিকে বোর পর্যায় সারণিও বলা হয়। মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার।

দীর্ঘাকার পর্যায় সারণি ( Long form of Periodic table ) :

দীর্ঘাকার পর্যায় সারণি

বিজ্ঞানী বোর (Bohr) ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে বিস্তৃত পর্যায় আকারে একটি পর্যায় সারণি তৈরি করেন। এটি দীর্ঘাকার পর্যায় সারণি বা বোরের পর্যায় সারণি নামে পরিচিত। বর্তমানে এ পর্যায় সারণিতে 7টি পর্যায় এবং 18টি শ্রেণি বা গ্রুপ রয়েছে।

দীর্ঘ পর্যায়ে 10টি করে d-ব্লক মৌল পর্যায় সারণির মধ্যভাগে থাকে। প্রতি পর্যায়ের শেষ প্রান্তে নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর অবস্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ল্যান্থানাইড ও অ্যাক্টিনাইড মৌলগুলোকে পৃথক দুই সিরিজ হিসেবে এ সারণির ষষ্ঠ এবং সপ্তম পর্যায়ের তৃতীয় গ্রুপে রাখা হয়েছে। এটিই হলো আধুনিক পর্যায় সারণি।

আধুনিক পর্যায় সারণির ভিত্তি : আধুনিক পর্যায় সারণিতে মৌলের পর্যায়ভিত্তিক শ্রেণিবদ্ধকরণের মূল ভিত্তি হলো মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ও ইলেকট্রন বিন্যাস। আবার পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসের ক্ষেত্রে অরবিটালসমূহের ইলেকট্রন ধারণের ক্রম অনুসারে মৌলসমূহকে চারটি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। নিচের চিত্র-৩.১ এ তা দেখানো হলো।

উল্লেখ্য ১০.১১.২০১৬ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও IUPAC সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত মৌলের সংখ্যা হলো ১১৮টি। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে অনুমোদিত 113, 115, 117 ও 118 পারমাণবিক সংখ্যার চারটি মৌল দ্বারা সপ্তম পর্যায়টি পূর্ণতা লাভ করলো। মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার।

আউফবাউ নীতি অনুসারে, পর্যায় সারণিতে সর্বোচ্চ বাম দিক থেকে ডানদিকে পর্যায়ক্রমে পরমাণুর অরবিটালসমূহে ইলেকট্রন প্রবেশের ক্রম হলো :

Is→ 2s 2p→ 3s→ 3p→ 4s→ 3d→ 4p→ 5s→ 4d→ 5p→ 6s→ 4f→ 5d→ 6p→ 7s→ 5f→ 6d→ 7p

ইলেকট্রন বিন্যাস অনুসারে মৌলসমূহের চারটি ব্লক ও এদের বর্ণনা হলো নিম্নরূপ :

(১) s-ব্লক মৌল : যেসব মৌলের সর্বশেষ ইলেকট্রনটি s অরবিটালে যায়, তাদেরকে s-ব্লক মৌল বলে। সেসব মৌলের সর্ববহিঃস্তরে s। অথবা s2 ইলেকট্রন বিন্যাস থাকে। পর্যায় সারণির গ্রুপ-1 ও 2 (IA ও IIA) মৌলসমূহ এবং He এ s-ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। s-ব্লকের মৌলের সংখ্যা হলো ১৪টি । যেমন,
H (1)
=
1s!
He (2)
JAT
=
1s2
Li (3)
=
1s2 2s1
Be (4)
=
1s2 2s2
1s2 2s2 2p6 3s2

MCQ-3.1 : ২০১৮ সাল পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও IUPAC সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত মৌলের সংখ্যা কত?

(ক) 113 (খ) 115
(1) 117
(118
Mg (12) =

s-ব্লক মৌলসমূহের সর্ববহিস্থ শক্তিস্তর বা যোজ্যতা স্তরের ইলেকট্রন বিন্যাস হলো ns বা ns2; এখানে n = 1, 2, 3 ইত্যাদি হলো প্রধান শক্তিস্তর বা অরবিট

নির্দেশক সংখ্যা । মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার।

চিত্র-৩.১ : পর্যায় সারণিতে মৌলসমূহের চারটি ব্লক ( s,p, d, f)।

(2) p-ব্লক মৌল : যেসব মৌলের পরমাণুতে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি p অরবিটালে যায়, তাদেরকে p-ব্লক মৌল বলে। পর্যায় সারণির গ্রুপ- 13, 14, 15, 16 17 18 (IIIA, IVA, VA, VIA, VIIA এবং VIIIA) গ্রুপের He ব্যতীত মৌলসমূহ এ ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া নতুন আবিষ্কৃত নিহোনিয়াম, Nh (113), ফ্লেরোডিয়াম, FI (114), মস্কোভিয়াম, Mc (115) ও লিভারমরিয়াম, Lv (116), টেনেসিন, Ts (117) ও ওগানেসান, Og (118) সহ বর্তমানে p-ব্লক মৌলের সংখ্যা ৩৬টি।

যেমন,
DAT
B (5)
C (6)
=
By Lifting others
1s 2 2s 2 2p 1
=
1s2 2s2 2p2
Al (13) = 1s2 2s2 2p6 3s 2 3pl
CI (17) =
1s2 2s2 2p6 3s 2 3p 5
Ar (18) = 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6

MCQ-3.2 s-ব্লকের মৌল সংখ্যা [চা, বো, ২০১৬] কত?

14 (4) 24 (1) 26 () 36
p-ব্লক মৌলসমূহের সর্ববহিস্থ শক্তিস্তর বা যোজ্যতা স্তরের সাধারণ ইলেকট্রন বিন্যাস হলো ns2np থেকে ns2np
এখানে n = 2, 3, 4, 5 ইত্যাদি সর্ববহিস্থ অরবিট হবে।
রসায়ন-১ম (হাসান) – ১৭ মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার।

মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন এর আরো কিছু

১০-১১-২০১৬ ইং পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও IUPAC সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত 113, 115, 117 ও 118 পারমাণবিক সংখ্যার চারটি মৌলের প্রতীক, ইংরেজি নাম ও নামের উচ্চারণ নিম্নরূপ :

113 Nh, Nihonium [ nee HOH – neeum] = নিহোনিয়াম 11s Mc, Moscovium Mah – SKOH – vee-um] = মস্কোভিয়াম 117 Ts, Tennessine [TEH -neh seen] = টেনেসিন

Og, Oganesson (OH- gah – NEH sun] = ওগানেসান
MCQ-3.3 : p ব্লকের মৌল সংখ্যা [য. বো. ২০১৬) কত?

() 14 (4) 36 (1) 41 () 27

(৩) d-ব্লক মৌল : যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি d অরবিটালে যায়, তাদেরকে d-ব্লক মৌল বলে। চতুর্থ পর্যায়ের স্ক্যানডিয়াম Sc ( 21 ) থেকে জিঙ্ক, Zn ( 30 ) এবং পঞ্চম পর্যায়ের ইট্রিয়াম, Y (39) থেকে ক্যাডমিয়াম, Cd (48) মৌলগুলো d-ব্লক মৌল। এছাড়া ষষ্ঠ পর্যায় ও সপ্তম পর্যায়ে d ব্লক মৌল আছে। তারা সবই ধাতু। পর্যায় সারণিতে গ্রুপ-3 থেকে 12 অর্থাৎ “B” উপশ্রেণির মৌলসমূহ এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

বর্তমানে d-ব্লক মৌলের সংখ্যা থোরিয়াম, Th(90) সহ ৪১টি। তাদের পরমাণুতে di থেকে dio ইলেকট্রন থাকে ।
যেমন,
MAT
Sc ( 21 ) = 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6 3d 4s 2 Fe (26) = 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6 3d6 4s2 Zn ( 30 ) = 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6 3d 10 4s 2
d-ব্লক মৌলগুলোর সর্ববহিস্থ শক্তিস্তর বা যোজ্যতাস্তরের সাধারণ ইলেকট্রন বিন্যাস হলো (n-1) d 10 ns1 – 2 । এখানে n = 4, 5, 6, 7 হবে ।

বিশেষ ধর্মবিশিষ্ট কতগুলো elements

d-ব্লক মৌলসমূহের মধ্যে বিশেষ ধর্মবিশিষ্ট কতগুলো মৌলকে অবস্থান্তর মৌল (transition elements) বলে। অবস্থান্তর মৌলের সংজ্ঞা : যে সব d-ব্লক মৌল অন্তত এমন একটি আয়ন গঠন করে, যাদের ইলেকট্রন বিন্যাসে d-অরবিটাল আংশিকভাবে পূর্ণ (d! – d) থাকে, তাদেরকে অবস্থান্তর মৌল বলে।
অবস্থান্তর মৌলসমূহের বৈশিষ্ট্য :

(১) অবস্থান্তর মৌলসমূহের পরিবর্তনশীল যোজ্যতা থাকে;

তারা রঙিন যৌগ গঠন করে;
MCQ-3.4
-ব্লক ও p ব্লকের
মৌল সংখ্যার ক্রম কোনটি?
(৩) তারা জটিল যৌগ গঠন করে, Se By Lifting an
(৪) তারা প্রভাবকরূপে ক্রিয়া করে,

(৫) তারা প্যারা চুম্বকীয় ধর্ম প্রদর্শন করে ।

36, 14 () 41.36 (1) 14, 36 () 14, 41

অবস্থান্তর মৌলের সংজ্ঞা মতে,(৪র্থ পর্যায়ের d-ব্লকভুক্ত Sc এবং Zn -এ দুটি মৌল অবস্থান্তর মৌল নয়। কারণ তারা কেবল Sc3+ আয়ন এবং Zn2+ আয়ন গঠন করে। Sc3+ আয়ন এর ইলেকট্রন বিন্যাসে 3d অরবিটালে কোনো ইলেকট্রন নেই এবং Zn2+ আয়ন এর ইলেকট্রন বিন্যাসে 3d অরবিটাল পূর্ণ অর্থাৎ 3d10 থাকে। মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার।

Sc 3 + ( 21 ) = 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6 3d
Zn2+ (30) = 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6 3d 10

অপরদিকে Fe হলো d-ব্লক মৌল ও অবস্থান্তর মৌল উভয়ই। কারণ এটির Fe2+ আয়ন ও Fe3+ আয়নের d-অরবিটাল আংশিকভাবে পূর্ণ থাকে। যেমন——
Fe 2+ = 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6 3d6
Fe3+ = 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6 3ds
MCQ-3.5 d-ব্লকের মৌল সংখ্যা [ঢা. বো. ২০১৭]
কত?
() 14 () 36 (1) 41 () 27
এজন্য বলা হয়, সব d-ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয়; কিন্তু সব অবস্থান্তর মৌল d-ব্লক মৌল বটে।

(8) f-ব্লক মৌল : এ সব মৌলের পরমাণুতে সর্বশেষ ইলেকট্রন f অরবিটালে যায়। ৬ষ্ঠ পর্যায়ের ল্যান্থানাম, La (57) থেকে পরবর্তী লুটেসিয়াম, Lu (71) পর্যন্ত পনেরটি মৌলকে ল্যান্থানয়স (Lanthanoids) বা ল্যান্থানাইড সিরিজ (Lanthanides) এবং অ্যাক্টিনিয়াম, Ac (89) থেকে পরবর্তী লরেনসিয়াম, Lr (103) পর্যন্ত পনেরটি মৌলকে অ্যাক্টিনয়স (Actinoids) বা অ্যাক্টিনাইড সিরিজ (Actinides) বলা হয়। এ দু’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ৩০টি মৌলকে বর্তমানে আধুনিকতম পর্যায় সারণির নিচে লেখা হয়েছে। [এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।] f-ব্লকের মৌলগুলোর সাধারণ ইলেকট্রন বিন্যাস হলো—

( n – 2) f1 – 14 ( n – 1 ) do. 1. 2 ns2; এখানে n = 6, 7 হবে ।

উল্লেখ্য ল্যান্থানাইড সিরিজের ১ম মৌল La (57) এর সর্বশেষ ইলেক্ট্রন 5d! এ এবং অ্যাক্টিনাইড সিরিজের প্রথম মৌল Ac (89) ও ২য় মৌল Th (90) এর সর্বশেষ ইলেকট্রন যথাক্রমে 6d! ও 6d2 রূপে আছে। তাই তারা f-ব্লক মৌল নয় । সুতরাং প্রকৃতপক্ষে [-ব্লক মৌলের সংখ্যা হলো ২৭টি (পর্যায় সারণি দ্রষ্টব্য)। মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার।

অন্তঃঅবস্থান্তর মৌল : অন্তঃঅবস্থান্তর মৌল

অন্তঃঅবস্থান্তর মৌল : অন্তঃঅবস্থান্তর মৌল

যে সব মৌলের কোনো সুস্থিত আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাস fl হতে f13 হয়, তাদেরকে অন্তঃঅবস্থান্তর মৌল (Inner transition elements) বলা হয়। তাদের একটি গ্রুপে বা ল্যান্থানাইড সিরিজভুক্ত মৌলে 4f অরবিটাল অসম্পূর্ণ থাকে এবং তাদের অন্য গ্রুপে বা, অ্যাক্টিনাইড সিরিজভুক্ত মৌলে 5f অরবিটাল আংশিক পূর্ণ থাকে। এরূপ অন্তঃঅবস্থান্তর মৌলের উদাহরণ হলো সেরিয়াম (58Ce)) = [Xe] 4f26s2। কারণ এর Ce3+ আয়নটিতে 4f1 ইলেকট্রন থাকে ।

আমরা দেখলাম এ যাবৎ (২০১৬ ইং যাবৎ) আবিষ্কৃত Nh (113), F1 (114) Me (115) Lv (116), Ts (117) ও Og (118) সহ মোট ১১৮টি মৌলকে পর্যায় সারণিতে এদের ইলেকট্রন বিন্যাস মতে চারটি ব্লক যেমন s-ব্লক, p-ব্লক, d-ব্লক ও f-ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এখন এসব ব্লকের মৌলসমূহের সাধারণ ধর্মাবলি জানতে চেষ্টা করব।

জেনে নাও :

(১) s-ব্লক মৌলগুলোর ক্ষেত্রে গ্রুপ সংখ্যা = সর্ববহিস্থ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন সংখ্যা । [এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।]
(2) p-ব্লক মৌলগুলোর ক্ষেত্রে গ্রুপ সংখ্যা = 10 + সর্ববহিস্থ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন সংখ্যা (ns এবং np (৩) d-ব্লক মৌলগুলোর ক্ষেত্রে গ্রুপ সংখ্যা = (n-1) d + ns উপস্তরের ইলেকট্রন সংখ্যা।

(8) f-ব্লক মৌলগুলোর ক্ষেত্রে গ্রুপ সংখ্যা = f-ব্লক মৌলসমূহ পর্যায় সারণির 3 নং গ্রুপে অবস্থান করবে।
শিক্ষার্থীর কাজ-৩.১ : ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে মৌল শনাক্তকরণ :
সমস্যা ৩.১: নিচের মৌলগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস লেখ এবং কোন মৌলটি কোন ব্লকের তা ব্যাখ্যা কর
C(6), Na(11), P(15), Ca(20), Cr(24), Fe(26)
সমস্যা-৩.২ : Sc(21) ও Zn(30) মৌল দুটি d-ব্লকভুক্ত মৌল হলেও এরা অবস্থান্তর মৌল নয়;-
এর ব্যাখ্যা কর।

ইলেকট্রন বিন্যাস হতে পর্যায় সারণিতে মৌলের অবস্থান নির্ণয়

Position of Elements in Periodic Table from Electronic Configuration

যেহেতু পর্যায় সারণির সত্যিকার ভিত্তি হচ্ছে ইলেকট্রন বিন্যাস, সেহেতু যে কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস হতে পর্যায় সারণিতে তার অবস্থান সহজেই বের করা যায়। কোনো মৌলের সত্যিকার ইলেকট্রন বিন্যাস জানা না থাকলেও মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা মতে অরবিটালের শক্তিক্রম অনুযায়ী তার ইলেকট্রন বিন্যাস লিখে পর্যায় সারণিতে এর স্থান নির্ণয় করা হয়। এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। [এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।]

(ক) পর্যায় সংখ্যা নির্ণয় : মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বোচ্চ প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n এর মান মৌলের পর্যায় সংখ্যা নির্দেশ করে। যেমন Na (11)-এর ইলেকট্রন বিন্যাস Na ( 11 ) = 1s2 2s2 2p6 3s। হতে দেখা যায়; এতে সর্বোচ্চ প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n = 3। সুতরাং Na মৌলটি ৩য় পর্যায়ে অবস্থিত।

(খ) গ্রুপ সংখ্যা নির্ণয় : কোন্ গ্রুপে মৌলটি অবস্থিত তা নির্ধারণের জন্য মৌলটির ইলেকট্রন বিন্যাসগত ব্লক ও যোজ্যতা ইলেকট্রন সংখ্যা জানা প্রয়োজন। যেমন,

(১) s-ব্লক মৌলসমূহের বেলায় সর্ববহিস্থ s অরবিটাল (nsi-2) এর মোট ইলেকট্রন সংখ্যা মৌলটির গ্রুপ সংখ্যা নির্দেশ করে। যেমন, ns দ্বারা গ্রুপ-1 এবং ns2 দ্বারা গ্রুপ-2 বোঝায়। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

(২) p-ব্লক মৌলসমূহের বেলায় ( 10 + ns2 npl-6) এর মোট ইলেকট্রন সংখ্যা গ্রুপ সংখ্যা নির্দেশ করে। যেমন, ns2np দ্বারা (10 + 2 + 1 ) = 13 নং গ্রুপ বোঝায়; ns2 np2 দ্বারা (10 + 2 + 2) = 14 নং গ্রুপ বোঝায় । [এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।]

(৩) d-ব্লক মৌলসমূহের বেলায় (n-1)d ns অরবিটাল দুটির মোট ইলেকট্রন সংখ্যা মৌলটির গ্রুপ সংখ্যা প্রকাশ করে।

(৪) f-ব্লক মৌলসমূহের বেলায় যোজ্যতা স্তরে f অরবিটালে ইলেকট্রন থাকে। f-ব্লকভুক্ত সব মৌল গ্রুপ-3 এর অন্তর্ভুক্ত। নিচে সাতটি উদাহরণ দ্বারা উপরোক্ত নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করা হলো । যেমন—–
উদাহরণ : Na ( 11 ) Cl ( 17 )

সমস্যা-৩.১ : সমাধানকৃত সমস্যা-৩.১ : পর্যায় সারণিতে নিম্নোক্ত পারমাণবিক সংখ্যাবিশিষ্ট মৌলসমূহের অবস্থান নির্ণয় কর :
() 18 (4) 22 (1) 29 (4) 48 () 16 (5) 59

সমাধান : (ক) পারমাণবিক সংখ্যা 18 বিশিষ্ট মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6 । সুতরাং অষ্টক পূর্ণ থাকায় এটি একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস। অতএব এটির গ্রুপ সংখ্যা 18। যেহেতু ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বোচ্চ প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা 3, সেহেতু মৌলটির অবস্থান ৩য় পর্যায়ে। তাই মৌলটির পর্যায় হলো 3 এবং গ্রুপ-18। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

(খ) পারমাণবিক সংখ্যা 22 বিশিষ্ট মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6 3d 4s2 । যেহেতু এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা 4, সেহেতু মৌলটি চতুর্থ পর্যায়ে অবস্থিত। অসম্পূর্ণ d অরবিটাল (3d2 ) হতে বোঝা যায় যে এটি d-ব্লক মৌল। 3d ও 4s অরবিটালে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা ( 2 + 2) = 4। অতএব এটির গ্রুপ সংখ্যা 4 । তাই মৌলটির পর্যায় হলো 4. গ্রুপ সংখ্যা- 41

মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন

(গ) পারমাণবিক সংখ্যা 29 বিশিষ্ট মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6 3d 10 4s 1 । যেহেতু এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা 4, সেহেতু মৌলটি চতুর্থ পর্যায়ে অবস্থিত। 3d 10 4s 1 ইলেকট্রন বিন্যাস থাকায় এটির গ্রুপ সংখ্যা- 11 । তাই মৌলটির পর্যায় সংখ্যা- 4, গ্রুপ সংখ্যা- 11

(ঘ) পারমাণবিক সংখ্যা 48 বিশিষ্ট মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p6 3d 10 4s 2 4p 4d10 552 | যেহেতু এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা 5, সেহেতু মৌলটি ৫ম পর্যায়ে অবস্থিত। 4d10 5s2 ইলেকট্রন বিন্যাসের কারণে এটির গ্রুপ সংখ্যা -12। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।
1

(ঙ) পারমাণবিক সংখ্যা 16 বিশিষ্ট মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস 1s2 2s2 2p6 3s 2 3p4 সর্বোচ্চ প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা 3 হওয়ায় মৌলটি ৩য় পর্যায়ে অবস্থিত। এটি একটি প্রতিরূপী মৌল 3s 3 3p অরবিটালে সর্বমোট ইলেকট্রন সংখ্যা (2 + 4) = 6 হওয়ায় এটি ( 10 + 6) = 16 গ্রুপে অবস্থিত।

(চ) পারমাণবিক সংখ্যা 59 বিশিষ্ট মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস Is2 2s2 2p6 3s 2 3p6 3d 10 4s 2 4p 4d10 4f 3 5s2 5p6 6s2 । সর্বোচ্চ কোয়ান্টাম সংখ্যা 6 হওয়ায় মৌলটি ৬ষ্ঠ পর্যায়ে অবস্থিত। আংশিক পূর্ণ 4f অরবিটাল থাকায় এটি একটি অন্তঃঅবস্থান্তর মৌল। অতএব এটি গ্রুপ -3 এর অন্তর্ভুক্ত। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

বিভিন্ন ব্লকের মৌলের সাধারণ ধর্মাবলি – General Properties of Blocks-Element

s-ব্লক মৌলসমূহ (s-block elements) :
s-ব্লক মৌল : যে সব মৌলের সর্বশেষ ইলেকট্রন s অরবিটালে প্রবেশ করে, তাদেরকে s-ব্লক মৌল বলে। পর্যায় সারণির গ্রুপ-1 ও গ্রুপ-2 এর 13টি মৌল ও He সহ মোট (14টি মৌল হলো s-ব্লকের মৌল। [এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।] এদের যোজ্যতা স্তরে বা সর্ববহিস্থ শক্তিস্তরে ns অথবা ns2 ইলেকট্রন থাকে।
s-ব্লকের ধাতুসমূহ দুটি বিশেষ নামে পরিচিত; যেমন—

(১) ক্ষার ধাতু বা অ্যালকালি মেটালস (alkali metals) ও (২) মৃৎ ক্ষার ধাতু বা alkaline earth metals
MCQ 3.6 : f-ব্লকের মৌল সংখ্যা কত? [ব. বো. ২০১৬]
() 14 () 41 (1) 30 (4) 27

(২) ক্ষার ধাতু : s-ব্লক মৌলসমূহের মধ্যে গ্রুপ-1 এর মৌলসমূহ যেমন Li Na K Rb Cs ও Fr ইত্যাদিকে ক্ষার ধাতু বলে। কারণ এসব মৌল পানির সাথে তীব্রভাবে বিক্রিয়া করে সবল ক্ষার ধাতব হাইড্রক্সাইড ও H2 গ্যাস উৎপন্ন করে। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।
যেমন-
2Li (s) + 2H2O (I) 2Na (s) + 2H2O (1)

2LiOH (aq) +
H 2 (g)

2NaOH (aq) +
H 2 (g)
2K (s) + 2H2O (1)
→ 2KOH (aq)

Ba ও Ra । এদের ns2 যোজ্যতা ইলেকট্রন

মৃৎ-ক্ষার ধাতু : গ্রুপ-2 এর ধাতব মৌলসমূহ হলো Be Mg Ca থাকে। এদেরকে মৃৎক্ষার ধাতু (alkaline earth metals) বলে। কারণ এ ধাতুগুলোর মধ্যে Mg ও Ca এর অক্সাইড ও কার্বনেট লবণ মাটি বা মৃত্তিকায় পাওয়া যায়। এরা পানির সাথে ধীরে বিক্রিয়া করে ধাতব হাইড্রক্সাইড ক্ষারক ও H2 গ্যাস উৎপন্ন করে।
Ca (s) + 2H2O (I)
Ca(OH)2 (aq) + H 2 (g)
CaO (s) + H2O (D) → Ca (OH) 2 (aq)

ব্লক ধাতব মৌলসমূহের সাধারণ ধর্মাবলি (General Properties of s-block metals)

(১) ৪-ব্লকের ধাতব মৌলসমূহ নিম্ন গলনাঙ্ক ও নিম্ন স্ফুটনাঙ্কবিশিষ্ট ধাতু। যেমন, গ্রুপ-1 এর সর্বোচ্চ গলনাঙ্কবিশিষ্ট ধাতু, হলো Li; এর গলনাঙ্ক হলো 180.5°C এবং Cs এর গলনাঙ্ক হলো 28.4°C। অপরদিকে Be এর গলনাঙ্ক 1278 °C, Ra এর গলনাঙ্ক হলো 700°C। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

(২) s-ব্লকের মৌলসমূহ নরম ও নমনীয় ধাতু; যেমন Na ধাতুকে ছুরি দিয়ে কাটা যায় । এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

(৩) গ্রুপ-1 এর ধাতুসমূহ, এদের যোজ্যতা ইলেকট্রন (ns!) ত্যাগ করে একক ধনাত্মক আয়ন (Li+Na+) এবং গ্রুপ-2 এর ধাতুসমূহ, এদের যোজ্যতা ইলেকট্রন (ns2) ত্যাগ করে দ্বিধনাত্মক আয়ন (Be2+, Mg2+) তৈরি করে । এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

(৪) গ্রুপ-1 ও গ্রুপ-2 এর ক্যাটায়নসমূহে কোনো বিজোড় বা অযুগ্ম ইলেকট্রন না থাকায় এদের যৌগসমূহ (বর্ণহীন) কিন্তু ব্যতিক্রম হলো এদের সাথে বর্ণযুক্ত ঋণাত্মক আয়নবিশিষ্ট ডাইক্রোমেট (K2Cr2O7 ), ক্রোমেট (K2 CrO4), ম্যাঙ্গানেট (K2MnO4) ও পারম্যাঙ্গানেট (KMnO4) লবণসমূহ বর্ণযুক্ত হয় ।

(৫) ক্যাটায়নসমূহে বিজোড় ইলেকট্রন না থাকায়, এরা ডায়াম্যাগনেটিক বা চুম্বকক্ষেত্র দ্বারা বিকর্ষিত হয় । (৬) গ্রুপ-1 এর ধাতুসমূহের আয়নীকরণ শক্তি সবচেয়ে কম; এদের তুলনায় গ্রুপ-2 এর ধাতুসমূহের আয়নীকরণ শক্তি বেশি হয় । এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি। [অনুচ্ছেদ ৩.৩ (ঘ) দেখ

(৭) s-ব্লক মৌল হলো তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক মৌল। এদের সক্রিয়তা একই গ্রুপের নিচের দিকের মৌলসমূহে বৃদ্ধি পায় । (৮) s-মৌলসমূহ তীব্র বিজারকরূপে ক্রিয়া করে। [এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।]

(ক) Be ও Mg ব্যতীত s-ব্লকের অন্য সব মৌল বুনসেন শিখায় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বর্ণ সৃষ্টি করে । এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

* বেরিলিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ধাতুর পরমাণু তুলনামূলকভাবে আকারে ছোট। এদের নিউক্লিয়াস দ্বারা যোজ্যতা ইলেকট্রন অধিক আকৃষ্ট থাকে; ফলে এদের আয়নীকরণ শক্তি অন্য সব s ব্লক মৌলের চেয়ে বেশি হয়। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি। বুনসেন শিখার তাপে এসব মৌলের যোজ্যতাস্তরের ইলেকট্রন উদ্দীপিত হয়ে উচ্চতর শক্তিস্তরে উন্নীত হতে পারে না। এ কারণে Be ও Mg এর পরমাণু বা ধাতব লবণ বুনসেন শিখায় কোনো বিশেষ বর্ণ সৃষ্টি করে না ।

(১০) Be ব্যতীত s-ব্লকের অন্য সব ধাতু আয়নিক যৌগ গঠন করে। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

ছোট আকারের জন্য কখনো Be2+ আয়ন সৃষ্টি হয় না। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি। Li পরমাণু Li+ আয়ন গঠন করলেও এর অধিক চার্জ ঘনত্বের কারণে পোলার সমযোজী যৌগে পরিণত হয়। এ কারণে Li-লবণ পানিতে কম দ্রবণীয়। LiCI, LiBr, Lil প্রভৃতি পোলার দ্রাবক অ্যালকোহল ও অ্যাসিটোন প্রভৃতি জৈব দ্রাবকে অধিক দ্রবণীয় হয় ।

s-ব্লক মৌলসমূহের প্রত্যেকটির ইলেকট্রন বিন্যাসকে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের প্রতীকের সাথে সর্ববহিস্থ শক্তিস্তর বা যোজ্যতা স্তরের ইলেকট্রন বিন্যাসসহ নিম্নরূপে দেখানো হয়। জেনে নাও : সবচেয়ে সবল ক্ষার বা, অ্যালকালি দ্রবণ হলো KOH, NaOH এবং LiOH দ্রবণ । এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধনঃ সমাধানকৃত সমস্যা

৩.২: Be ও Mg ধাতু বুনসেন শিখায় কোনো বিশেষ বর্ণ সৃষ্টি করে না কেন; ব্যাখ্যা কর। সমাধান : Be ও Mg পরমাণুর আকার অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় এদের আয়নীকরণ শক্তি বেশি। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি। বুনসেন শিখার তাপ শক্তি এদের যোজ্যতা ইলেকট্রনকে উচ্চ শক্তিস্তরে উত্তোলিত করতে পারে না। তাই এরা শিখায় বর্ণ সৃষ্টি করে না । এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

s-ব্লক মৌলসমূহের রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং এদের বুঝে মনে রাখার নিয়ম :

(১) অধাতুসহ আয়নিক যৌগ : s-ব্লকের গ্রুপ- I ও গ্রুপ-2 এর মৌলসমূহের প্রত্যেকে পর্যায় সারণির অধাতব মৌল H2, হ্যালোজেন (X2 = F2, Cl2, B12, I2 ), O2, N 2, C ইত্যাদির সাথে আয়নিক যৌগ গঠন করে। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি। [ ওপরের চিত্রে দেখ] (২) নাইট্রাইড ও কার্বাইডের আর্দ্র বিশ্লেষণ : s-ব্লকের ধাতব নাইট্রাইড (M3N, G3 N2) ও ধাতব কার্বাইড (M.C.GC) গরম পানির সংস্পর্শে আদ্রবিশ্লেষিত হয়ে যথাক্রমে NH3, HC=CH (অ্যাসিটিলিন) গ্যাস ও ধাতব হাইড্রক্সাইড উৎপন্ন করে। এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

[ওপরের বিক্রিয়া দেখ যেমন Mg ধাতুকে N2 গ্যাসসহ উত্তপ্ত করলে আয়নিক যৌগ ম্যাগনেসিয়াম নাইট্রাইড (Mg3N2) গঠন করে। Mg2N2 অণুতে নাইট্রাইড আয়নের অধিক পোলারায়নের কারণে এটি সমযোজী যৌগের মতো গরম পানিতে সহজে আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে Mg(OH)2 ও NH3 গ্যাস উৎপন্ন করে :


Mg (s) + Mg3N2 (s) +
করে।
অনুরূপভাবে
ও অ্যাসিটিলিন গ্যাম্যাগনেসিয়াম কার্বাইড
Mg (s)
+
MgC2 (s) +
N2 (g) 6H2O ( 1 ) (MgC2) গঠিত
Mg3N2 (s)
3Mg(OH) 2 (s) + 2NH3 (g)

2C (s)
2H2O (l) →
MgC2 (s) Mg(OH) 2 (s) +
HC=CH (g)

(৩) পানিসহ বিক্রিয়া : গ্রুপ-1 এর অধিক সক্রিয় ধাতুসমূহ প্রবলভাবে পানির সাথে বিক্রিয়া করে সবল ক্ষার যেমন NaOH, KOH ও H2 গ্যাস উৎপন্ন করে। এজন্য গ্রুপ-1 এর ধাতুসমূহকে ক্ষার ধাতু বলে। কিন্তু গ্রুপ-2 এর কম সক্রিয় ধাতুসমূহ পানির সাথে ধীরে বিক্রিয়া করে ধাতুর হাইড্রক্সাইড ও H2 গ্যাস উৎপন্ন করে। এছাড়া গ্রুপ-2 এর ধাতুর যৌগ মাটির অন্যতম উপাদান হওয়ায় গ্রুপ-2 এর ধাতুসমূহকে মৃৎক্ষার ধাতু বলে। [ওপরের বিক্রিয়া দেখ
(৪) এসিডের H-প্রতিস্থাপন : HCI এসিডের সাথে গ্রুপ-1 ও গ্রুপ-2 এর ধাতুসমূহ প্রবলভাবে বিক্রিয়া করে ধাতব ক্লোরাইড ও H2 গ্যাস উৎপন্ন করে । এটি আমরা মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন চ্যাপ্টার থেকে জেনেছি।

আরো পড়ুনঃ প্রাণীর বিভিন্নতা বা প্রাণিবৈচিত্র্য সাজেশন প্রথম অধ্যায়

Leave a Comment