মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি? মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি দুটি ভিন্ন অর্থনৈতিক ধারণা। মূল্যস্ফীতি বলতে কোন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য ও সেবার দামের গড় বৃদ্ধিকে বোঝায়। অন্যদিকে, মুদ্রাস্ফীতি বলতে কোন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতার হ্রাসকে বোঝায়।

মূল্যস্ফীতি সাধারণত দুটি কারণে ঘটে:

  • চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি: যখন কোন দেশের জনসংখ্যার চাহিদা পণ্য ও সেবার সরবরাহের চেয়ে বেশি হয়, তখন পণ্য ও সেবার দাম বাড়ে।
  • ব্যয়জনিত মূল্যস্ফীতি: যখন পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়, তখন পণ্য ও সেবার দাম বাড়ে।

মুদ্রাস্ফীতি ঘটে মূলত নিম্নলিখিত কারণে:

  • অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহ: যখন কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপায়, তখন মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: যখন কোন দেশের অর্থনীতিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটে, তখন মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ: যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি? মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে কিছু মিলও রয়েছে। যেমন, উভয় ক্ষেত্রেই পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধি পায়। তবে, মূল্যস্ফীতি পণ্য ও সেবার দামের গড় বৃদ্ধিকে বোঝায়, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতার হ্রাসকে বোঝায়।

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি সেটি জেনে নিন। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে পড়ে। মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করে। মুদ্রাস্ফীতি মুদ্রার মূল্যহীনতাকে ত্বরান্বিত করে এবং অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

মুদ্রাস্ফীতি বলতে কী বোঝায়?

মুদ্রাস্ফীতি বলতে কী বোঝায়

মুদ্রাস্ফীতি বলতে কোন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতার হ্রাসকে বোঝায়। সহজ ভাষায় বললে, একই পরিমাণ অর্থ দিয়ে আগে যে পরিমাণ পণ্য ও সেবা কিনতে পারতাম, এখন সেই পরিমাণ পণ্য ও সেবা কিনতে আরও বেশি অর্থ খরচ করতে হয়।

মুদ্রাস্ফীতির হারকে সাধারণত বার্ষিক হারে প্রকাশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি দেশের মুদ্রাস্ফীতির হার ৫% হয়, তাহলে সে দেশের মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা প্রতি বছর ৫% কমে যায়। এর মানে হল, এক বছর আগে ১০০ টাকা দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য ও সেবা কিনতে পারতাম, এখন সেই পরিমাণ পণ্য ও সেবা কিনতে ১০৫ টাকা খরচ করতে হবে।

মুদ্রাস্ফীতি ঘটে মূলত নিম্নলিখিত কারণে:

  • অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহ: যখন কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপায়, তখন মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: যখন কোন দেশের অর্থনীতিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটে, তখন মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ: যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।

মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে পড়ে। মুদ্রাস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করে। মুদ্রাস্ফীতি মুদ্রার মূল্যহীনতাকে ত্বরান্বিত করে এবং অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেমন, সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রার সরবরাহ কমানো, ইত্যাদি।

মুদ্রাস্ফীতির হারের উপর ভিত্তি করে মুদ্রাস্ফীতিকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যেমন,

  • হালকা মুদ্রাস্ফীতি: যখন মুদ্রাস্ফীতির হার ২ থেকে ৫% এর মধ্যে থাকে, তখন তাকে হালকা মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।
  • মাঝারি মুদ্রাস্ফীতি: যখন মুদ্রাস্ফীতির হার ৬ থেকে ১০% এর মধ্যে থাকে, তখন তাকে মাঝারি মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।
  • উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি: যখন মুদ্রাস্ফীতির হার ১১ থেকে ২০% এর মধ্যে থাকে, তখন তাকে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।
  • হাইপারইনফ্লেশন: যখন মুদ্রাস্ফীতির হার ২৫% এর বেশি থাকে, তখন তাকে হাইপারইনফ্লেশন বলা হয়।

হালকা মুদ্রাস্ফীতি সাধারণত অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে, মাঝারি, উচ্চ এবং হাইপারইনফ্লেশন অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।

মুদ্রাস্ফীতির কারণ গুলো কি কি?

মুদ্রাস্ফীতির কারণ গুলো কি কি

মুদ্রাস্ফীতির কারণ গুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  • চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতি: যখন কোন দেশের জনসংখ্যার চাহিদা পণ্য ও সেবার সরবরাহের চেয়ে বেশি হয়, তখন পণ্য ও সেবার দাম বাড়ে। এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতিকে চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।
  • ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতি: যখন পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়, তখন পণ্য ও সেবার দাম বাড়ে। এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতিকে ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।

চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতির কারণ:

  • অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহ: যখন কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপায়, তখন মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।
  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: যখন কোন দেশের অর্থনীতিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটে, তখন মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।
  • শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি: যখন শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পায়, তখন তারা বেশি কেনাকাটা করতে শুরু করে। এর ফলে চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।
  • অর্থনৈতিক অস্থিরতা: যখন কোন দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন মানুষ বেশি অর্থ খরচ করতে শুরু করে। এর ফলে চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।

ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতির কারণ:

  • উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি: যখন পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়, তখন পণ্য ও সেবার দাম বাড়ে। এই ধরনের ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।
  • কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি: যখন কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পায়, তখন পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।
  • শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি: যখন শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পায়, তখন উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।
  • কর বৃদ্ধি: যখন কর বৃদ্ধি পায়, তখন উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।

মুদ্রাস্ফীতি একটি অর্থনৈতিক সমস্যা। এটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

মূল্যস্ফীতি কিভাবে নির্ণয় করা হয়?

মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে, সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হলো ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) ব্যবহার করে। CPI হলো একটি সূচক যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবার দামের গড় বৃদ্ধিকে পরিমাপ করে।

CPI নির্ণয়ের জন্য প্রথমে একটি নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবার একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকাটিকে বলা হয় ভোক্তা ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য ও সেবা তালিকা (CPI basket)। এই তালিকাটিতে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেমন খাদ্য, বাসস্থান, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ইত্যাদি।

এরপর, এই তালিকাভুক্ত পণ্য ও সেবার দাম প্রতি বছর সংগ্রহ করা হয়। দাম সংগ্রহ করার সময়, ভিত্তি বছরের দামকে 100 ধরা হয়। এরপর, পরবর্তী বছরের দামকে ভিত্তি বছরের দামের সাথে তুলনা করে একটি সূচক গণনা করা হয়।

এই সূচকটিকে CPI বলা হয়। CPI-এর মান 100 এর বেশি হলে বুঝতে হবে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। CPI-এর মান যত বেশি হবে, মূল্যস্ফীতির হার তত বেশি হবে।

CPI ছাড়াও, মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের জন্য অন্যান্য পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। যেমন, নিট পণ্য ও সেবা মূল্য সূচক (NIPI), উৎপাদন মূল্য সূচক (PPI), ইত্যাদি।

NIPI হলো একটি সূচক যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার দামের গড় বৃদ্ধিকে পরিমাপ করে। PPI হলো একটি সূচক যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যয়ের বৃদ্ধিকে পরিমাপ করে।

উৎপাদন মূল্য সূচক (PPI) ব্যবহার করে মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে, উৎপাদন ব্যয়ের বৃদ্ধিকে ভোক্তা মূল্য সূচকের সাথে তুলনা করে মূল্যস্ফীতির হার নির্ণয় করা হয়।

মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে, কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে তা নির্ভর করে মূল্যস্ফীতির প্রকৃতি ও উদ্দেশ্যের উপর।

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি মধ্যে পার্থক্য কি?

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি? মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি দুটি ভিন্ন অর্থনৈতিক ধারণা। মূল্যস্ফীতি বলতে কোন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য ও সেবার দামের গড় বৃদ্ধিকে বোঝায়। অন্যদিকে, মুদ্রাস্ফীতি বলতে কোন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতার হ্রাসকে বোঝায়।

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি এবং এদের মধ্যে কই কই মিল রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে কিছু মিল রয়েছে। যেমন, উভয় ক্ষেত্রেই পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধি পায়। তবে, মূল্যস্ফীতি পণ্য ও সেবার দামের গড় বৃদ্ধিকে বোঝায়, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতার হ্রাসকে বোঝায়।

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি এবং এদেরকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? মূল্যস্ফীতির কারণগুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  • চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি: যখন কোন দেশের জনসংখ্যার চাহিদা পণ্য ও সেবার সরবরাহের চেয়ে বেশি হয়, তখন পণ্য ও সেবার দাম বাড়ে। এই ধরনের মূল্যস্ফীতিকে চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি বলা হয়।
  • ব্যয়জনিত মূল্যস্ফীতি: যখন পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়, তখন পণ্য ও সেবার দাম বাড়ে। এই ধরনের মূল্যস্ফীতিকে ব্যয়জনিত মূল্যস্ফীতি বলা হয়।

মুদ্রাস্ফীতির কারণগুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  • অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহ: যখন কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপায়, তখন মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।
  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: যখন কোন দেশের অর্থনীতিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটে, তখন মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে পড়ে। মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করে। মুদ্রাস্ফীতি মুদ্রার মূল্যহীনতাকে ত্বরান্বিত করে এবং অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি এবং এদের মধ্যে পার্থক্য? মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:

বৈশিষ্ট্য মূল্যস্ফীতি মুদ্রাস্ফীতি
সংজ্ঞা পণ্য ও সেবার দামের গড় বৃদ্ধি মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতার হ্রাস
প্রভাব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি মুদ্রার মূল্যহীনতা, অর্থনীতিতে অস্থিরতা
কারণ চাহিদাজনিত, ব্যয়জনিত অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
পরিমাপ ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI), নিট পণ্য ও সেবা মূল্য সূচক (NIPI), উৎপাদন মূল্য সূচক (PPI) CPI, NIPI, PPI
নিয়ন্ত্রণ সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রার সরবরাহ কমানো সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রার সরবরাহ কমানো

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি? মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি দুটিই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করে। মুদ্রাস্ফীতি মুদ্রার মূল্যহীনতাকে ত্বরান্বিত করে এবং অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

মুদ্রাস্ফীতি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো, নাকি খারাপ?

মুদ্রাস্ফীতি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো নাকি খারাপ তা নির্ভর করে মুদ্রাস্ফীতির হার এবং এর কারণগুলির উপর।

কম মাত্রার মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতির জন্য ভালো হতে পারে। এটি অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যখন মুদ্রাস্ফীতির হার ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায়, তখন শ্রমিকরা তাদের মজুরি বাড়াতে পারে, যা তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি ব্যবসায়ের জন্যও ভালো হতে পারে, কারণ এটি তাদের পণ্য ও সেবার দাম বাড়াতে সাহায্য করে।

তবে, উচ্চ মাত্রার মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন মুদ্রাস্ফীতির হার দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তখন মানুষের বেতন বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় না। এটি দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

মুদ্রাস্ফীতির কারণগুলিও অর্থনীতির জন্য এর প্রভাবকে প্রভাবিত করে। চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতি সাধারণত অর্থনীতিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধির কারণে হয়। এটি অর্থনৈতিক উন্নতির লক্ষণ হতে পারে, তবে এটি উচ্চ মাত্রায় হলে অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতি সাধারণত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি বা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কারণে হয়। এটি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে কারণ এটি ব্যবসায়ের ব্যয় বৃদ্ধি করে এবং তাদের লাভ হ্রাস করতে পারে।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি সুদের হার বাড়াতে পারে। এটি অর্থ সরবরাহ কমাতে সাহায্য করে এবং মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করে।

মূল্যস্ফীতি কিভাবে পরিমাপ করা হয়

মূল্যস্ফীতি কিভাবে পরিমাপ করা হয়

মূল্যস্ফীতি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য ও সেবার দামের গড় বৃদ্ধিকে বোঝায়। মূল্যস্ফীতি পরিমাপের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে, সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হলো ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) ব্যবহার করে।

CPI হলো একটি সূচক যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবার দামের গড় বৃদ্ধিকে পরিমাপ করে। CPI নির্ণয়ের জন্য প্রথমে একটি নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবার একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকাটিকে বলা হয় ভোক্তা ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য ও সেবা তালিকা (CPI basket)। এই তালিকাটিতে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেমন খাদ্য, বাসস্থান, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ইত্যাদি।

এরপর, এই তালিকাভুক্ত পণ্য ও সেবার দাম প্রতি বছর সংগ্রহ করা হয়। দাম সংগ্রহ করার সময়, ভিত্তি বছরের দামকে 100 ধরা হয়। এরপর, পরবর্তী বছরের দামকে ভিত্তি বছরের দামের সাথে তুলনা করে একটি সূচক গণনা করা হয়।

এই সূচকটিকে CPI বলা হয়। CPI-এর মান 100 এর বেশি হলে বুঝতে হবে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। CPI-এর মান যত বেশি হবে, মূল্যস্ফীতির হার তত বেশি হবে। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি?

CPI ছাড়াও, মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের জন্য অন্যান্য পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। যেমন, নিট পণ্য ও সেবা মূল্য সূচক (NIPI), উৎপাদন মূল্য সূচক (PPI), ইত্যাদি।

NIPI হলো একটি সূচক যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার দামের গড় বৃদ্ধিকে পরিমাপ করে। PPI হলো একটি সূচক যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যয়ের বৃদ্ধিকে পরিমাপ করে।

উৎপাদন মূল্য সূচক (PPI) ব্যবহার করে মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে, উৎপাদন ব্যয়ের বৃদ্ধিকে ভোক্তা মূল্য সূচকের সাথে তুলনা করে মূল্যস্ফীতির হার নির্ণয় করা হয়।

মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে, কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে তা নির্ভর করে মূল্যস্ফীতির প্রকৃতি ও উদ্দেশ্যের উপর।

মুদ্রাস্ফীতি ইংরেজি কি

মুদ্রাস্ফীতি শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল inflationInflation শব্দটি লাতিন শব্দ inflare থেকে এসেছে, যার অর্থ to blow up বা to swell। অর্থাৎ, মুদ্রাস্ফীতি হল সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধি পায়।

মুদ্রাস্ফীতি শব্দটিকে ইংরেজিতে বিভিন্নভাবে লেখা হয়। যেমন:

  • inflation
  • inflation rate
  • rate of inflation
  • price inflation
  • consumer price inflation
  • cost-push inflation
  • demand-pull inflation

মুদ্রাস্ফীতির তীব্রতা পরিমাপ করার জন্য inflation rate শব্দটি ব্যবহার করা হয়। Inflation rate হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির হারকে প্রকাশ করে এমন একটি সংখ্যা।

উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো দেশের inflation rate 5% হয়, তাহলে এর অর্থ হলো সেই দেশের মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা প্রতি বছর 5% হারে হ্রাস পাচ্ছে এবং পণ্য ও সেবার দাম প্রতি বছর 5% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় কি

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি এবং এদেরকে নিয়ন্ত্রণের উপায় কি? মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এই উপায়গুলিকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:

  • আর্থিক ব্যবস্থা
  • রাজস্বসংক্রান্ত ব্যবস্থা
  • প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

আর্থিক ব্যবস্থা

আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মূলত সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সুদের হার বাড়ানো হলে, ব্যবসায়ীরা ঋণ নেওয়া কমিয়ে দেয়, ফলে উৎপাদন ব্যয় কমে যায় এবং পণ্য ও সেবার দাম কমে আসে।

রাজস্বসংক্রান্ত ব্যবস্থা

রাজস্বসংক্রান্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের ব্যয় কমানোর এবং কর বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থের সরবরাহ কমানো হয়। সরকারের ব্যয় কমানো হলে, অর্থের সরবরাহ কমে যায় এবং পণ্য ও সেবার দাম কমে আসে। কর বৃদ্ধি করলে, মানুষের হাতে কম টাকা থাকে এবং তারা কম পণ্য ও সেবা ক্রয় করে, ফলে পণ্য ও সেবার চাহিদা কমে যায় এবং দাম কমে আসে।

প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মাধ্যমে সরকার নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবার দাম নিয়ন্ত্রণ করে। তবে, এই পদ্ধতিটি সাধারণত স্বল্পমেয়াদী জন্য কার্যকর হয়।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে তা নির্ভর করে মুদ্রাস্ফীতির কারণ এবং তীব্রতার উপর।

আমাদের হোম পেইজটি ভিজিট করুন।

Leave a Comment