হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলেই খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই তারাবির নামাজের দোয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে তারাবির নামাজের দোয়া সম্পর্কে বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক।
তারাবির নামাজের দোয়া
তারাবির নামাজের দোয়া দুই ধরনের। একটি দোয়া হলো প্রতি চার রাকাত পরপর পড়া হয়। আরেকটি দোয়া হলো তারাবির নামাজ শেষে পড়া হয়।
প্রতি চার রাকাত পরপর পড়া দোয়া
سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْأَعْظَمَ، سُبْحانَ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوتُ أَبَدًا أَبَدًا، سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنَا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ.
উচ্চারণ:
সুবহানাজিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানাজিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি, সুবহানাল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামতু আবাদান আবাদা সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।
অর্থ:
মহাপরাক্রমশালী ও মালিকানাস্বরূপ আল্লাহ পবিত্র, মহান ও সম্মানিত আল্লাহ পবিত্র, চিরঞ্জীব আল্লাহ পবিত্র, যিনি কখনো ঘুমোন না এবং কখনো মরে না, আমাদের রব, ফেরেশতাদের রব এবং আত্মার রব।
তারাবির নামাজ শেষে পড়া দোয়া
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ إِيمَانًا كَامِلًا، وَقَلْبًا سَلِيمًا، وَعِلْمًا نَافِعًا، وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا، وَرِزْقًا وَاسِعًا، وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ، وَعَافِيَةً فِي الدِّينِ وَالدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَالْفَوْزَ بِالْجَنَّةِ، وَالنَّجَاةَ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ঈমানান কামিলান, ওয়া ক্বালব্বান সালিমান, ওয়া ইলমান নাফিআন, ওয়া আমালান মুতাকাব্বালান, ওয়া রিযক্বান ওয়াসিআন, ওয়া শিফাআন মিন কুল্লি দায়িন, ওয়া আফিয়াতান ফিদ্দীনি ওয়াদদুনিয়া ওয়াল আখিরাতি, ওয়াল ফাওজা বিল জান্নাতি, ওয়ান নাজাতা মিনান নার।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট কামনা করি পরিপূর্ণ ঈমান, পরিশুদ্ধ অন্তর, উপকারী জ্ঞান, কবুলযোগ্য আমল, প্রশস্ত রিযক, সকল রোগের আরোগ্য, দ্বীন, দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা, জান্নাতে প্রবেশ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি।
এছাড়াও, তারাবির নামাজের সময় যেকোনো দোয়া পড়া যায়।
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত
তারাবির নামাজের দোয়া
তারাবির নামাজের প্রতি চার রাকাত পরপর একটি দোয়া পড়ার প্রচলন রয়েছে। এই দোয়াটি হলো:
سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْجَبَرُوْتِ، سُبْحانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدًا، سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ الْمْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ.
অর্থ:
মহামহিম ও মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। পরাক্রমশালী ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। চিরঞ্জীব রাজার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, যিনি কখনো ঘুমোন না এবং কখনো মৃত্যুবরণ করেন না। পবিত্র ও মঙ্গলময় আল্লাহ আমাদের রব এবং ফেরেশতাদের রব এবং রূহের রব।
তারাবির নামাজের মোনাজাত
তারাবির নামাজ শেষে মোনাজাত করা সুন্নত। মোনাজাতের মধ্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা, রহমত, বরকত, নেয়ামতের জন্য দোয়া করা হয়। মোনাজাতের কিছু উদাহরণ হলো:
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنَا مِنَ التَّوَّابِیْنَ وَاجْعَلْنَا مِنَ الْمُتَطَهِّرِیْنَ، وَاجْعَلْنَا مِنْ عِبَادِكَ الصَّالِحِیْنَ.
অর্থ:
হে আল্লাহ, আমাদেরকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং আমাদেরকে পবিত্রদের অন্তর্ভুক্ত কর। এবং আমাদেরকে তোমার নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।
اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا صَلَاتَنَا وَصِیَامَنَا وَقِیَامَنَا وَتَقَبَّلْ مِنَّا كُلَّ عَمَلٍ صَالِحٍ نَّعْمَلُهُ.
অর্থ:
হে আমাদের রব, আমাদের সালাত, আমাদের সিয়াম, আমাদের কিয়াম এবং আমাদের সকল নেক আমল কবুল কর।
اَللّٰهُمَّ اِنَّا نَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.
অর্থ:
হে আল্লাহ, আমরা তোমার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।
এছাড়াও, ব্যক্তিগতভাবে নিজের জন্য বা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, দেশ-জাতি, মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা যেতে পারে।
তারাবির নামাজের নিয়ম
তারাবির নামাজের নিয়ম
তারাবির নামাজ হলো রমজান মাসে পড়া একটি সুন্নাত নামাজ। এটি দুই রাকাত করে পড়া হয়। প্রত্যেক দুই রাকাতের পর সালাম ফিরানো হয়। এভাবে চার রাকাত পড়ার পরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া হয়। এসময় বিভিন্ন তাসবিহ-তাহলিল পড়া উত্তম।
তারাবির নামাজের নিয়ত
তারাবির নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বা মনে মনে করা যায়। মুখে উচ্চারণ করলে আরবিতে নিয়ত করা উত্তম। বাংলায়ও নিয়ত করা যাবে।
তারাবির নামাজের নিয়ত
আরবি:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ:
আমি আল্লাহর দরবারে নিয়ত করছি, যে আমি আল্লাহর জন্য দুই রাকাআত তারাবির সুন্নত নামাজ আদায় করছি, কেবলার দিকে মুখ করে। আল্লাহু আকবার।
বাংলা:
আমি আল্লাহর দরবারে নিয়ত করছি, যে আমি আল্লাহর জন্য দুই রাকাআত তারাবির সুন্নত নামাজ আদায় করছি, কেবলার দিকে মুখ করে। আল্লাহু আকবার।
তারাবির নামাজের ধারাবাহিকতা
১. তাকবীরে তাহরীমা
২. সূরা ফাতিহা
৩. সূরা বাকারা (অথবা অন্য যেকোনো সূরা)
৪. রুকু
৫. সেজদা
৬. দ্বিতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়ানো
৭. সূরা ফাতিহা
৮. সূরা বাকারা (অথবা অন্য যেকোনো সূরা)
৯. রুকু
১০. সেজদা
১১. তৃতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়ানো
১২. সূরা ফাতিহা
১৩. তাশাহুদ
১৪. দু'আয়ে মাসূরা
১৫. সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা
তারাবির নামাজের ফজিলত
তারাবির নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ফজিলত হলো:
- তারাবির নামাজ পড়লে আল্লাহ তা’আলা বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন।
- তারাবির নামাজ পড়লে বান্দার রিজিক বৃদ্ধি পায়।
- তারাবির নামাজ পড়লে বান্দার হায়াত দীর্ঘ হয়।
- তারাবির নামাজ পড়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে।
তারাবির নামাজের সময়
ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত তারাবির নামাজের সময়। তবে, অধিকাংশ আলেমদের মতে, ইশার নামাজের পর থেকে তারাবির নামাজ পড়া সুন্নত।
তারাবির নামাজের সুন্নত
তারাবির নামাজের কিছু সুন্নত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সুন্নত হলো:
- তারাবির নামাজ দুই রাকাত করে পড়া।
- প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়া।
- তারাবির নামাজে ইতিকাফ করা।
- তারাবির নামাজে ইমামের সাথে মিলে নামাজ পড়া।
তারাবির নামাজ পড়ার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে। তাই, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করা।
তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া হলো একটি সুন্নত। নবী করীম (সাঃ) তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া করতেন।
তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া করার জন্য কোন নির্দিষ্ট দোয়া নেই। তবে, কিছু দোয়া রয়েছে যা তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর পড়া যেতে পারে।
একটি দোয়া:
اَللّٰهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা পছন্দ করো, অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো।
আরেকটি দোয়া:
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ رَبِّيْ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَاَنَا عَبْدُكَ وَاَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ اَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ اَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَاَبُوْءُ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَاِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাকতানী ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাততু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাআতু আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিযুনবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আংতা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার বান্দা, আমি তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকারের উপর যথাসাধ্য প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমি তোমার প্রতি আমার নিয়ামত স্বীকার করি এবং আমার গুনাহ স্বীকার করি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি ছাড়া গুনাহ ক্ষমা করার ক্ষমতা রাখে না।
তারাবি নামাজের দোয়া সুবহানা জিল মুলকি
তারাবি নামাজের দোয়া সুবহানা জিল মুলকি
তারাবি নামাজের চার রাকাত পরপর পড়ার জন্য একটি দোয়া হলো “সুবহানা জিল মুলকি”। এই দোয়াটি খুবই সুন্দর ও অর্থপূর্ণ।
দোয়াটি হলো:
سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْجَبَرُوْتِ، سُبْحانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدًا، سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ الْمْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ.
উচ্চারণ:
সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইজ্জাতি ওয়াল জাবারুতি, সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুতু আবাদান আবাদ, সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।
অর্থ:
মহান ও মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। পরাক্রমশালী ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। চিরঞ্জীব রাজার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, যিনি কখনো ঘুমোন না এবং কখনো মৃত্যুবরণ করেন না। পবিত্র ও মঙ্গলময় আল্লাহ আমাদের রব এবং ফেরেশতাদের রব এবং রূহের রব।
এই দোয়াটি পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা করা হয় এবং তাঁর কাছে সাহায্য ও দোয়া চাওয়া হয়। এই দোয়াটি পড়লে আল্লাহ আমাদের গুনাহ মাফ করে দেন এবং আমাদের জীবনে রহমত ও কল্যাণ বর্ষণ করেন।
উপসংহার
আমি আশা করছি আপনারা আপনাদের তারাবির নামাজের দোয়া এই প্রশ্নের উওর পেয়েছেন। আরো কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম