গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ সাজেশন দ্বিতীয় পর্ব

গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব

মূলভাব: মানুষের নিজের ও সমাজের কল্যাণ এবং মুক্তিসাধনে জ্ঞানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু জ্ঞানের স্বাভাবিক বিকাশ যেখানে রুদ্ধ হয়, বুদ্ধির বিকাশও সেখানে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে সেখানে মুক্তির পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। সম্প্রসারিত ডাব: মানবসভ্যতার অভাবনীয় উন্নতির পেছনে রয়েছে, -মানুষের জ্ঞান-জিজ্ঞাসা। জগৎ ও জীবনের রহস্য অনুসন্ধান করতে গিয়েই মানুষ উত্তরোত্তর আবিষ্কার করে চলেছে নতুন নতুন জিনিস, উৎপাদন করছে নতুন নতুন কৃষিজাত ও শিল্পজাত পণ্য । আর এসবের নতুন নতুন উপযোগিতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজের ও সমাজের প্রভূত কল্যাণ সাধন করে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, জ্ঞানকে পুঁজি করে দেশে দেশে, কালে কালে মানুষ শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করে যাচ্ছে। আর শিল্প- সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষ মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ ও ভালো লাগা, ভালোবাসার রহস্য উদ্ঘাটনে নিয়োজিত থাকছে। এতে করে মানুষের দুঃখ-কষ্ট প্রশমনের মধ্য দিয়ে আত্মিক কল্যাণ সাধিত হচ্ছে। মানুষ জীবন-বাস্তবতাকে সহজে মেনে নিতে পারছে। অন্যদিকে, পৃথিবীতে বিভিন্ন দৈশে বিভিন্ন কালে নানারকম অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অন্ধবিশ্বাস এবং নানারকম ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার জ্ঞানের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। আর যে সমাজে জ্ঞান সীমাবদ্ধ অর্থাৎ জ্ঞান বিকাশের সুযোগ নেই, সেখানে বুদ্ধিও আড়ষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে সে সমাজের মানুষগুলোকে অন্ধকারেই দিনাতিপাত করতে হয়; মুক্তির স্বাদ লাভ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।

এই একবিংশ শতাব্দীতে অনেক সমাজের মানুষ বিশ্বাস করে যে, ডায়রিয়া-আমাশয় হলো ওলাবিবি নামক দৈত্যের কুদৃষ্টির ফল; অনেক সমাজের মানুষ মনে করে যে শুভ দিন-ক্ষণ না দেখে কোনো কাজে নামলে শত চেষ্টার পরও সে কাজে সফলতা লাভ করা যায় না। আবার অনেক রক্ষণশীল পরিবারের লোকেরা মনে করে যে, মেয়েদের স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষালাভ করা ধর্মীয় অনুশাসনের পরিপন্থী। কিন্তু এগুলো বুদ্ধির দ্বারা সমর্থিত কি না তা মানুষ যাচাই করে দেখে না।

মন্তব্য: প্রত্যক্ষণ ও যাচাই ছাড়া কোনো কিছুকে গ্রহণ বা বর্জন করা উচিত নয়। যে সমাজের মানুষ জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে যাচাই না করে কেবল অন্ধবিশ্বাস ও অযৌক্তিক ধারণার ভিত্তিতে গ্রহণ কিংবা বর্জন করে, সে সমাজের মানুষের পক্ষে বুদ্ধির বিকাশসাধন কিংবা মুক্তির স্বাদ গ্রহণ- কোনোটিই সম্ভব নয়।

মূলভাব: কোনো মানুষের মহৎ, উদার ও চরিত্রবান হওয়া অন্যের ভালো বা মন্দ হওয়ার ওপর নির্ভর করে না। উত্তম স্বভাবের মানুষ কখনো অধম ও হীন স্বভাবের মানুষের ন্যায় আচরণ করেন না। সম্প্রসারিত ভাব; সমাজের সব মানুষ এক রকমের হয় না। কেউ ভালো, কেউ মন্দ। কিছু মানুষ আছে যারা সমাজ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে অন্যায়-অপকর্ম এবং অন্যের ক্ষতিসাধন করা থেকে বিরত থাকে। এ শ্রেণির মানুষ সমাজে উত্তম মানুষ হিসেবে গণ্য। আবার মানুষের মধ্যে যেমন রয়েছে সুপ্রবৃত্তি বা বিবেকবুদ্ধি ও ঔচিত্যবোধের তাড়না, তেমনি রয়েছে কুপ্রবৃত্তির প্ররোচনা। আর আছে ব্যক্তিস্বার্থের আকর্ষণ।

এসব কারণে মানুষ পারস্পরিক স্নেহ-প্রীতি ও প্রেম-ভালোবাসার কথা ভুলে গিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা এবং নানা অন্যায় অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এ শ্রেণির মানুষ সমাজে অধম মানুষ হিসেবে পরিগণিত। সমাজে এদের প্রভাবও কম নয়। অনেকেই এ শ্রেণির লোকদের অনুকরণ- অনুসরণ করে থাকে। কারণ তাদের ধারণা যে, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অসৎ। তাই তাদের সৎ হওয়ার চেষ্টা করা একেবারেই অর্থহীন। কিন্তু এ ধরনের ভাবনা একেবারেই অর্থহীন ও বোকামিপূর্ণ। কারণ মানুষ হিসেবে আমাদের ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, ন্যায়-অন্যায় ও উচিত-অনুি পার্থক্য উপলব্ধি করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই আমাদের ভালোটাকেই গ্রহণ করতে হবে এবং মন্দটাকে বর্জন করতে হবে। অর্থাৎ অন্যরা অধম বলে আমাদেরও অধম হলে চলবে না।

বিবেকের তাড়নায় তাড়িত হয়ে আমাদের উত্তম হওয়ার সাধনা করতে হবে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, সমাজে অধম লোকের কোনো স্থান নেই। সমাজ তাদের নিন্দা ও অবহেলার চোখে দেখে। অন্যদিকে, উত্তম লোক মানুষের শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসার পাত্র। এছাড়া সমাজে উত্তম মানুষরূপে বেঁচে থাকার মধ্যে একটা গৌরব ও আত্মতৃপ্তি রয়েছে। মন্তব্য: মন্দ স্বভাবের মানুষ ব্যক্তির ও সমাজের অনিষ্ট চিন্তায় বিভোর থাকে। কিন্তু উত্তম স্বভাবের ব্যক্তির পক্ষে অনুরূপ আচরণ এবং চিন্তার প্রকাশ অপ্রার্থিত ও অনুচিত।

তাই আজ প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, মানুষ গড়ে তুলতে চাইছে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ।

তাই আজ প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, মানুষ গড়ে তুলতে চাইছে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ।

মূলভাব: আধিপত্য বিস্তার নয় বরং মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধই বেশি বাঞ্ছনীয়। মানুষকে প্রকৃতির সাথে সখ্য গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রসারিত ভাব: জীব জগতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রাণী হচ্ছে মানুষ। সর্বশ্রেষ্ঠ বলেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্ভর করেছে এবং প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারে প্রয়াসী হয়েছে।

মানুষ প্রথম দিকে একান্তই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল হলেও যখন সে সভ্য হতে শুরু করল তখন থেকেই পৃথিবীকে নিজেদের উপযোগী করে তোলার সর্বাঙ্গীণ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। দেশ ও জনপদ গড়ে তোলার জন্য বন উজাড় করেছে, বন্যপ্রাণী ধ্বংস করেছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। প্রথমদিকে এর প্রভাব ব্যাপকভাবে লক্ষণীয় না হলেও শিল্পযুগের আবির্ভাবের পর থেকে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিগত শতাব্দীতে বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নয়নের ফলে মানুষ প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারেই মনোযোগী হয়েছে বেশি। ফলে বন উজাড়, সাগর- নদ-নদী ভরাট, অত্যধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ, পানিদূষণ, বায়ুদূষণ নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতির ওপর মানুষের এ সর্বগ্রাসী আধিপত্যের বিরূপ প্রতিক্রিয়া যে প্রকৃতি দেয়নি এমনটি নয়।

বিশ্বে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে— ফলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাচ্ছে জনপথ। আবার অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সাইক্লোন, টর্নেডো প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসছে মানুষের ওপর। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত সমগ্র পৃথিবী একদিন মরুভূমিতে পরিণত হবে, নয়তো সমুদ্রের অতল জলে ডুবে যাবে। তবে এসব থেকে পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার একটিই উপায়, প্রকৃতির ওপর আধিপত্যের পরিবর্তে প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়া। পরিবেশের জন্য যা কিছু হুমকিস্বরূপ তার ব্যবহার সীমিত করে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন সংরক্ষণ, বনায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম শুরু করে মানুষ চাইছে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ গড়ে তুলতে। মন্তব্য: প্রকৃতি তার অপার উপকরণ দিয়ে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তুলেছে তাই নিজের স্বার্থেই মানুষকে প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারের পরিবর্তে মৈত্রীর সম্বন্ধ স্থাপন করতে হবে।

দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর।

মূলভাব: অরণ্যের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। এটি সুখে- দুঃখে মানুষকে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়। অন্যদিকে, অরণ্যহীন নগর রোমান্টিক ও সৃষ্টিশীল মানুষের কাছে এক যন্ত্রণাদায়ক স্থান সম্প্রসারিত ভাব: সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানুষ অরণ্যের সান্নিধ্যে জীবনযাপন করে। তখন থেকেই অরণ্য যেন মানুষকে সস্নেহে লালন-পালন করার ভার নিজের হাতে নিয়ে নেয়। অরণ্য নানারক ফুল-ফল বিভিন্ন খাবার- দাবার মানুষকে সরবরাহ করত। মানুষের জীবনধারণের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে অক্সিজেন তা মানুষ অরণ্যের কাছ থেকেই পেয়ে থাকে। অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত সংঘটনসহ মানুষের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অরণ্যের রয়েছে বিরাট ভূমিকা।

কিন্তু অরণ্যের মহাসমারোেহ এখন আর লক্ষ করা যায় না। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে মানুষ অরণ্যকে ধ্বংস করে সেখানে নগর পত্তন করছে। আবার মানুষ তার গৃহ-নির্মাণ, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্ৰ-নিৰ্মাণ, জ্বালানি সমস্যা সমাধানসহ নানা প্রয়োজনে অরণ্যের প্রধান সম্পদ বৃক্ষকে অকাতরে নিধন করছে। ফলে মানুষের জীবন- প্রক্রিয়াও আজ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, অরণ্য-প্রকৃতিকে ধ্বংস করে মানুষ যে নগরের পত্তন করেছে সে নগর মানুষকে সুখ দিতে পারছে না। প্রয়োজনীয় সুযোগের অভাবে এখানে অনেক মানুষের সুপ্ত বাসনা ও সৃষ্টিশীলতার অকালমৃত্যু ঘটে। এখানে অন্যের দুঃখের কথা শোনার কারো সময় নেই।

পারস্পরিক স্নেহ-মমতা, সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতা, আন্তরিকতা—এসব যেন এখানে একেবারেই অনুপস্থিত; যেটুকু আছে তাও যেন কৃত্রিমতার আবরণে আচ্ছাদিত। এখানকার মানুষগুলোও কেমন যেন যান্ত্রিক স্বভাবের। এ কারণেই বোধ হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপলব্ধি— ‘ইটের পরে ইট মাঝে মানুষ কীট।’

মন্তব্য: মানুষের জীবনে অরণ্যের প্রয়োজনীয়তা বহুমাত্রিক। তাই ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর’- এ আহ্বান আজ আর কেবল কোনো রোমান্টিক বা সৃষ্টিশীল মানুষের নয়; এটি আজ সব সচেতন মানুষেরই প্রাণের দাবি।

দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য

দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য

মূলভাব: চরিত্রহীন ব্যক্তি মাত্রই দুর্জন। এ শ্রেণির মানুষ মহাবিদ্বান হলেও তাদের সঙ্গ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তাদের বিদ্যা লোকসমাজে উপকারের চেয়ে অপকারই করে বেশি। এ বিদ্বান-দুর্জনের সাহচর্যে নিষ্কলুষ চরিত্রও হতে পারে কলুষিত। সম্প্রসারিত ভাব: বিদ্যা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। বিদ্যার হিরণ্ময় দীপ্তিতে মানুষ হয়ে ওঠে মহীয়ান। বিদ্বান ব্যক্তি সর্বত্র মর্যাদাবান ও মহাসম্মানের পাত্র।

কিন্তু বিদ্বান ব্যক্তি যদি চরিত্রবান না হন, তাহলে তাঁর পরিণতি মঙ্গলজনক হয় না। বস্তুত চরিত্র বিদ্যার চেয়ে বেশি মূল্যবান। বিদ্বান ও চরিত্রবান ব্যক্তি দেশ ও জাতির অনন্য সম্পদ। সচ্চরিত্র ব্যক্তি মূর্খ হলেও অসচ্চরিত্র বিদ্বানের চেয়ে অধিকতর মান্য ও গ্রহণযোগ্য। কাজেই চরিত্রহীন দুর্জন সুপণ্ডিত হলেও তার সাহচর্য পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। বিদ্যা অমূল্য সম্পদ হলেও তা অর্জনের জন্যে চরিত্রহীন ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়া কোনোক্রমেই উচিত নয়। কারণ দুর্জনের সাহচর্যে নিষ্কলুষ চরিত্রও কলুষিত হতে পারে।

দুর্জন ব্যক্তি বিদ্যা-বুদ্ধিতে মহাপণ্ডিত বলে খ্যাতিমান হলেও সবার উচিত তার সঙ্গ পরিহার করা। কারণ চরিত্রহীনের বিদ্যা-বুদ্ধি জ্ঞানবান বা চরিত্রবান ব্যক্তির কোনো কাজে লাগে না। বরং তাদের কলুষ স্পর্শে জীবনের অমূল্য সম্পদ চরিত্র চিরতরে কলুষিত হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, জীবনের সর্বক্ষেত্রেই অসচ্চরিত্র ব্যক্তির সাহচর্য পরিত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়।

মন্তব্য: চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। চরিত্র নষ্ট হলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, পশুতে পরিণত হয়। তাই চরিত্রহীন দুর্জন বিদ্বান ব্যক্তির সাহচর্য পরিহার করাই শ্রেয়।

দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ। 

মূলভাব: নীতি ও নৈতিকতাবিরোধী কাজই হচ্ছে দুর্নীতি। এর প্রভাবে একটি জাতির স্বপ্ন ও সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। তাই দুর্নীতি জাতির জীবনে চরম অভিশাপের সঙ্গে তুলনীয়। F अ সম্প্রসারিত ভাব: শিক্ষা ও মূল্যবোধের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট মনুষ্যত্ববোধ মানুষকে সৃষ্টিজগতে দান করেছে মহিমান্বিত মর্যাদা। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুষের এ শ্রেষ্ঠত্ব আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। সততা ও সুনীতির প্রশ্নে মনুষ্য সমাজ আজ ভাবিত। আজ এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, কোনো জাতির সামগ্রিক জীবনাচরণে সততা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটলে জাতীয় জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়ের অশনিসংকেত। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র আক্রান্ত হয় দুর্নীতির রাহুগ্রাসে। সংকটাপন্ন হয়ে স ওঠে জাতীয় অস্তিত্ব।

সম্প্রতি আমাদের দেশে মহামারি আকারে দেখা হ দিয়েছে ‘দুর্নীতি’ নামক ব্যাধিটি। দুর্নীতি একটি জাতীয় অভিশাপ। মুষ্টিমেয় মানুষ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকে। কালক্রমে একটা অনিবার্য পথ ধরে সমাজকে গ্রাস করে প্রসারিত হতে শুরু করে রাষ্ট্রীয় বৃহৎ আঙিনা পর্যন্ত। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলেই অসদুপায় অবলম্বন করতে থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত থা হয় দেশের অর্থনীতি, ব্যাহত হয় জাতীয় উৎপাদন। এগুলো দুর্নীতির ব্য প্রত্যক্ষ ফল। সচেতনভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, দুর্নীতির স রাষ্ট্রীয়করণের সুদূরপ্রসারি ফলাফল খুবই ভয়াবহ।

কেননা এটা মানুষের বি কোমল প্রবৃত্তিসমূহকে সমূলে বিনাশ করে দেয়। জাতি হয়ে পড়ে হতাশাগ্রস্ত— যা তাদের মধ্যে পাশবিকতার জন্ম দিয়ে থাকে। দুর্নীতির মত্ত এ নেতিবাচক দিকটির সবচেয়ে বড় শিকার হয় যুবসম্প্রদায় পরিশীলিত চিন্তাবোধের অভাবে সাফল্যলাভের জন্য তারা সহজেই অশুভ of মান পনে ২১১ ও ধ্বংসের পথ বেছে নেয়। নষ্ট হয়ে যায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানবীয় উন্মেষের সম্ভাবনা। এভাবে জাতীয় জীবনে সৃষ্টি হয় অস্তিত্বের সংকট।

মন্তব্য: দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি কখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করতে পারে না। আমাদের— বিশেষত দেশের শিক্ষিত সমাজকে এটা উপলব্ধি করতে হবে। সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর ভবিষ্যৎ সমাজ গড়তে হলে জাতীয় জীবন থেকে দুর্নীতির অপসারণ করা খুবই জরুরি।

দুঃখের মতো এত বড় পরশপাথর আর নাই।

মূলভাব: দুঃখের স্পর্শে মানুষের স্বীয়সত্তা ও অন্তর্গত শক্তি জাগ্রত হয়। দুঃখের মধ্য দিয়েই মানুষ সত্যিকার মনুষ্যত্ব লাভ করে। দুঃখের পরশেই মানুষের বিবেক মহান হয়। সম্প্রসারিত ভাব: দুঃখ-কষ্টের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই মানুষের মধ্যে জন্ম নেয় প্রজ্ঞা ও মহত্ত্বের। দুঃখের করুণ দহন শেষে যে সুখ আবির্ভূত হয়, তা অনাবিল ও অতুলনীয়। দুঃখের আগুনই মানুষের মনুষ্যত্ব ও বিবেককে খাঁটি সোনায় পরিণত করে। পৃথিবীর সব মূল্যবান সম্পদ দুঃখের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে। দুঃখ ছাড়া প্রকৃত সুখ অর্জন সম্ভব নয়।

সুখের অনুভূতি বুঝতে হলে আমাদের দুঃখকে আপন করে নিতে হবে। দুঃখ না পেলে সুখের উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। মনীষীরা দুঃখকে পরশপাথরের সাথে তুলনা করেছেন। পরশপাথরের ছোঁয়ায় লোহা যেমন সোনায় পরিণত হয়, তেমনই দুঃখরূপ পরশ-পাথরের ছোঁয়ায় মানুষের সব গ্লানি দূর হয়ে যায়। ফলে মানুষ লাভ করে জীবনের সার্থকতা। জগতের সব সাফল্যের সাথে জড়িয়ে আছে সীমাহীন দুঃখের মর্মান্তিক ইতিহাস। বাংলা প্রবাদে আছে— ‘কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না।’

দুঃখ-কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অধ্যবসায় ছাড়া জীবনে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ কষ্ট আছে বলেই আমাদের সুখী হরার এত আকুলতা। আর এই সুখী হবার জন্যই আমরা নানা দুঃসাধ্য সাধন করি, জীবনকে করি মহিমান্বিত। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন— ‘দুঃখই জগতে একমাত্র সকল পদার্থের মূল্য। মাতৃস্নেহের মূল্য দুঃখে, পতিব্রতের মূল্য দুঃখে, বীর্যের মূল্য দুঃখে, পুণ্যের মূল্য দুঃখে। সুতরাং, দুঃখকে বর্জন করা অসম্ভব। অসম্ভব মন্তব্য: দুঃখ মানুষের সকল জড়তা ও দৈন্য দূর করে তাকে করে সুন্দর। দুঃখের ভেতর দিয়েই মানুষ জীবনসাধনায় সিদ্ধি লাভ করে। সুতরাং, জাগতিক সকল প্রাপ্তির পূর্বশর্ত দুঃখের পরশ।

মানুষ মানুষ নয়, মনের মানুষই মানুষ। 

সকলের ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকে যে মানুষ সে-ই প্রকৃত মানুষ; ধনসম্পদে গড়া মানুষ প্রকৃত অর্থে মানুষ নয়। বরং যার একটি উদার মন আছে সেই মানবসমাজের আদর্শ হিসেবে বিবেচ্য। সম্প্রসারিত ভাব: ধনসম্পদ থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ হতে হলে পরোপকারী মন থাকতে হবে। পরোপকারী মন না থাকলে বিত্তবান মানুষ, সাধারণ মানুষের কোনো কল্যাণে আসে না। তাই সাধারণ মানুষের ভালোবাসা থেকে সে হয় বঞ্চিত। মৃত্যুর সাথে সাথে তার ঐশ্বর্যের পরিসমাপ্তি ঘটে। কেউ তাকে মনে রাখে না।

কিন্তু ধনসম্পদহীন মানুষ সবার কাছে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেতে পারে, যদি তার পরোপকারী মন থাকে। বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী ব্যক্তির যদি সংকীর্ণ মন থাকে তবে ওই ব্যক্তির ঐশ্বর্যের কোনো মূল্যই নেই জনসাধারণের কাছে। কারণ তার দ্বারা সমাজের কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না। মৃত্যুর সাথে সাথে এ ব্যক্তিও বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু পরোপকারী মানুষ বেঁচে থাকে মানুষের হৃদয়ের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে। |

মন্তব্য: ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তিরা মানুষের ওপর দৃশ্যত প্রভাব ফেললেও তারা মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে পারে না, যদি তাদের পরোপকারী মন না থাকে। পরোপকারী মন যাদের আছে তারাই প্রকৃত মানুষ।

আরো পড়ূনঃ গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ সাজেশন তৃতীয় পর্ব

Leave a Comment