গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ সাজেশন প্রথম পর্ব

গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ

সৌজন্যেই সংস্কৃতির পরিচয় (গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ)

মূলভাব: সৌজন্য একটি বিশেষ গুণ এবং মার্জিত ও শিষ্টাচারসম্পন্ন মানুষেরআচরণের প্রধান অনুষঙ্গ। . সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের মধ্যে সৌজন্যবোধ আপনা-আপনি তৈরি হয় না,জন্মসূত্রেও একে লাভ করা যায় না। শিক্ষা, বিচিত্র অভিজ্ঞতা, সহৃদয়পূর্ণ ও কোমল মানস-প্রকৃতি মানুষের সৌজন্যবোধের জাগরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মানুষের জীবনের একটি দীর্ঘ সময় বিদ্যায়তনিক পরিবেশে বা জ্ঞানচর্চার কাজে অতিবাহিত হয়। সময়েই মানুষ শিষ্টাচারী হয়ে উঠে। শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সৌজন্যতা বা শিষ্টাচার অর্জন। ফলে, শিক্ষিত মানুষের সৌজন্যবোধ না থাকলে সে শিক্ষা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। অপরদিকে কালচার বা সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের সামগ্রিক জীবন-প্রণালী, আচার-আচরণ, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদির ধরণ বা সংস্কৃতিবান মানুষের জগৎ ও জীবনের প্রতি থাকে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যায়ন।

সাধারণ মানুষ থেকে একজন সংস্কৃতিবান মানুষকে সহজেই চিহ্নিত ও পৃথক করা যায়। সর্বসাধারণের মধ্যে তার স্বাতন্ত্র্য সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। এদিক থেকে সৌজন্য হচ্ছে সংস্কৃতিবান মানুষের আচরণের একমাত্র অবলম্বন। ব্যক্তির আচরণে অসৌজন্যমূলক কিছু প্রকাশ পেলে তাকে আর যাই হোক সংস্কৃতিবান মনে করা হয় না। ভাবা হয়, তার উদ্ভব, বিকাশ ও পদচারণা অবশ্যই নিচু সংস্কৃতির মধ্যে। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত ও সভ্য দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানকার মানুষের আচরণ মাধুর্যপূর্ণ এবং সৌজন্যে পরিপূর্ণ। যে জাতি যত বেশি উন্নত, সভ্য এবং অলোকপ্রাপ্ত তাদের মধ্যে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ ততো বেশি। এভাবে, সৌজন্য ব্যক্তি, জাতি ও দেশের সংস্কৃতির পরিচয় অন্য ব্যক্তি জাতি ও দেশের কাছে তুলে ধরে।

মন্তব্য: সৌজন্যহীনতা ব্যক্তির সম্পর্কে নেতিবাচক ও অপসংস্কৃতির ধারণার উদ্রেক করে। কাজেই সৌজন্যবোধ বিভিন্ন পর্যায় সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের পরিচয় প্রদানে অশেষ গুরুত্ব বহন করে ভাবসম্প্রসারণ ┃

অর্থই অনর্থের মূল (গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ)

অর্থই অনর্থের মূল

মূলভাব: অর্থ মানুষের সকল কর্মের চালিকাশক্তি হলেও এ অর্থই আবার সব রকম অনর্থের সূত্রপাত ঘটায়। পৃথিবীর যাবতীয় অন্যায় ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড এই অর্থের কারণেই হয়ে থাকে। সম্প্রসারিত ভাব: পার্থিব জগতের ভালো-মন্দ সকল কাজের পেছনে রয়েছে অর্থের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। অর্থ ছাড়া পৃথিবীর ভালো-মন্দ কোনো কাজই সম্পাদন করা সম্ভব নয়। তাই পার্থিব জীবনে মানুষের অর্থ অর্জনের প্রয়াসের শেষ নেই। অর্থ বা সম্পদের মোহে মানুষ জীবনসংগ্রামে যুক্ত। মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত অর্থ উপার্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করে এবং নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে। আজকাল অর্থই মানুষের একান্ত কাম্য হয়ে উঠেছে। কেননা একমাত্র অর্থের মাপকাঠি দিয়েই সমাজে প্রতিপত্তি ও সম্মান নির্ণীত হয়। বিপদে-আপদে, উৎসবে, জন্ম-মৃত্যুতে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন।

আবার এ অর্থই পৃথিবীর সমস্ত অমঙ্গলের জন্য দায়ী। অর্থের লোভে নীতিবিবর্জিত হয়ে মানুষ অহরহ নানা দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়। অর্থের লালসা মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটায়। অর্থের লোভেই মানুষ চরিত্রহীন হয়ে সমাজবিরোধী ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবীর সমস্ত দ্বন্দ্ব, অশান্তি আর সংঘাতের মূল কারণ অর্থ। অবৈধ ও অগাধ অর্থ-সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধের উন্মাদনা জাগে, শ্রমিক-মালিকে বাধে বিরোধ এবং ভাইয়ে-ভাইয়ে শুরু হয় চরম শত্রুতা। অর্থের লোভেই মানুষ মানুষকে খুন করে। জগতের সকল অশান্তি আর অনর্থের উৎস হচ্ছে অর্থ। অর্থের মাঝে আমরা জগতের সুখ খুঁজি কিন্তু অর্থই অনর্থের মূল।

মন্তব্য: যে অর্থ মানুষের সামগ্রিক মঙ্গল সাধনে সমর্থ সে অর্থই আবার যাবতীয় অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অর্থ যেন অনর্থের কারণ হতে না পারে, সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে।

অর্থসম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনো বিনষ্ট হয় না। (গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ)

জ্ঞানসম্পদ

মূলভাব: জ্ঞান অমূল্য সম্পদ। এটি ক্ষয়হীন চিরন্তন ও অবিনশ্বর। অর্থসম্পদ অতি প্রয়োজনীয় তবে এ সম্পদের বিনাশ বা ক্ষয় আছে। অর্থসম্পদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি হলেও জ্ঞানসম্পদের প্রয়োজনীয়তা অবিনাশী। সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য অর্থসম্পদের যে প্রয়োজন আছে এ কথা অনস্বীকার্য। এ অর্থসম্পদ আহরণের জন্য মানুষ নিরন্তর কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। এমনকি আজকের দুনিয়াও ছুটছে অর্থসম্পদের পেছনে। কিন্তু এ অর্থসম্পদ চিরস্থায়ী নয়, এর ক্ষয় বা বিনাশ আছে। যার কারণে বাস্তবে দেখা যায় বিত্তবান ব্যক্তি সময়ের ব্যবধানে অঢেল বিত্তের অধিকারী হয় আবার অনেক সময় সব হারিয়ে পথে দাঁড়ায়। কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনো হারানোর ভয় থাকে না। বরং উত্তরোত্তর জ্ঞানের প্রসার ঘটে। মেধা-মনন, প্রতিভা তথা জ্ঞান এক ধরনের সম্পদ।

এ সম্পদ মানুষের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করে। মানুষকে আলোর পথে সুন্দরের পথে এগিয়ে চলতে সাহায্য করে। এ সম্পদ কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে না। জীবন যত দিন থাকবে ততদিন এ সম্পদ ছায়ার মতো ব্যক্তির সকল বাধা-বিপত্তি দূর করতে সাহায্য করে। জ্ঞান মানুষকে অর্থের মোহ থেকে রক্ষা করে, অর্থের নেশায় যেন পশুর মতো অমানুষে পরিণত না হয় সেই দিকনিদের্শনা দেয়। শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দের বোধ জাগ্রত করে। শিক্ষার ফলেই মানুষ বুঝতে পারে ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’।

আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে জ্ঞানের ভূমিকা প্রধান, অর্থ সম্পদ সেখানে প্রয়োজন হিসেবে কাজ করেছে। জ্ঞানসম্পদ মানুষকে অমরত্নদান করে,মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে। কিন্তু অর্থসম্পদের অধিকারী ব্যক্তি মৃত্যুর পর মন থেকে বিলীন হয়ে যায়। জ্ঞানই মানুষকে স্মরণীয়-বরণীয় করে তোলে, অর্থবিত্ত কখনো তা পারে না। অতএব, যেকোনো মূল্যে জ্ঞানসম্পদ অর্জন করতে হবে মন্তব্য: জ্ঞান নামক অমূল্য সম্পদ যুগের পর যুগ পৃথিবীতে টিকে থাকবে। কিন্তু অর্থসম্পদ আজ আছে, কাল নেই। তাই সকলেরই লক্ষ্য হওয়া উচিত অঢেল অর্থ নয় বরং প্রচুর জ্ঞান আহরণ।

সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে। (গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ) 

মূলভাব: শক্তিবোধ ব্যক্তি এবং তার পরিবেশকে প্রসারিত ও অগ্রগামী করে। ফলে শক্তিশালী ব্যক্তি নিজেকে প্রসারিত করতে পারে। পক্ষান্তরে, দুর্বল ব্যক্তি নিজেকে সর্বদা সংকুচিত করে রাখে। সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ সবল ও দুর্বল দু রকমই হতে পারে। সবল বা শক্তিশালী মানুষেরা সাধারণত সমাজ ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। পাশাপাশি তার আপন ব্যক্তিত্বেরও অনুকরণীয় আত্মপ্রসার ঘটে। কেননা মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তির স্বরূপই হচ্ছে, তা সবসময় ব্যক্তি এবং তার পারিপার্শ্বিকতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্য কথায়, নিজের এবং তাঁর চারপাশের পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারার ক্ষমতাকেই আমরা মানুষের শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি।

আর সেসব ব্যক্তিই প্রকৃত অর্থে সবল। মানবসভ্যতার ইতিহাসে যেকোনো ক্ষেত্রেই সবল মানুষদের কার্যক্রম সম্প্রসারণশীল। সক্রেটিস, প্লেটো, আইজ্যাক নিউটন, আইনস্টাইনসহ যুগে যুগে সকল শক্তিশালী ব্যক্তিই সভ্যতার প্রয়োজনে সম্প্রসারণশীল ভূমিকা পালন করেছেন। পক্ষান্তরে, দুর্বলচিত্তের আত্মবিশ্বাসহীন মানুষেরা স্বভাবগতভাবেই নিজেকে গুটিয়ে রাখার পক্ষপাতী। তারা নিজেদের দুর্বলতা পরিশ্রমের মাধ্যমে দূর করতে প্রয়াসী হয় না। বরং তাদের অক্ষমতাকে ঢাকতে এরা স্বেচ্ছায় বেছে নেয় আত্মগোপন। তারা নিজেকে সমাজ ও চারপাশের জিজ্ঞাসা থেকে আড়াল করে রেখেই আত্মপ্রসাদ লাভ করে। আমাদের চারপাশে এ রকম সংকীর্ণচিত্ত দুর্বল মানুষের অভাব নেই।

মন্তব্য: স্বভাবগতভাবে সব মানুষেরই অন্তর্নিহিত শক্তি বা ক্ষমতা রয়েছে।এ শক্তির পরিচর্যা করে ব্যক্তিত্বের সম্প্রসারণই সবল মানুষের বিশেষত্ব ·দুর্বলচিত্তের আচরণ আত্মকেন্দ্রিক এবং তা কারো কাছেই কাম্য নয়। ভাবসম্প্রসারণ ┃

মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নহে। (গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ)

মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নহে।

মূলভাব: মানবজীবন সংক্ষিপ্ত হলেও পৃথিবীতে মানুষ স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকে তার কীর্তির মাঝে। আর সে কীর্তি মানুষের কর্মসাধনারই ফল। | সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ মাত্রই জন্মমৃত্যুর অধীন। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ | করলে অনিবার্যভাবে একদিন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। আর মৃত্যুর মধ্য দিয়েই সে জগৎ-সংসার থেকে নিঃশেষ হয়ে যায়। কিন্তু কীর্তিমান ব্যক্তির দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও তার স্মৃতি পৃথিবীর বুকে চির অম্লান হয়ে থাকে। পৃথিবীতে সে নিজস্ব কীর্তির মহিমায় লাভ করে অমরত্ব। সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলে পৃথিবীতে কেউ তাকে আর স্মরণ করে না। অথচ কীর্তিমানের মৃত্যু হলে তার দেহের ধ্বংস সাধন হয় বটে কিন্তু তার সৎ কাজ, অম্লান কীর্তি পৃথিবীর মানুষের কাছে তাকে বাঁচিয়ে রাখে।

তার মৃত্যুর শত শত বছর পরেও মানুষ তাকে স্মরণ করবেই। তাই একথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা কর্মের সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মানুষ পৃথিবীতে আসে এবং সে সময়সীমা পার হওয়ার সাথে সাথে সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। এ নির্দিষ্ট সময়সীমায় সে যদি গৌরবজনক কীর্তির সাক্ষরে জীবনকে মহিমান্বিত করে তুলতে সক্ষম হয়, মানবকল্যাণে কাজ করে তবে তার নম্বর দেহের মৃত্যু হলেও তার স্বকীয় সত্তা থাকে মৃত্যুহীন; পৃথিবীর মানুষের কাছে সে হয় অমর। তার অমর কীর্তির মাঝেই সে বেঁচে থাকে। যদি সে তাঁর জীবনে কোনো মহৎ কীর্তি না করে তবে সে হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে।

মন্তব্য: মানুষের দেহ নশ্বর কিন্তু তার কীর্তি অবিনশ্বর। মানুষের কল্যাণে কেউ যদি অবিরাম কাজ করে প্রতিষ্ঠা করেন অমর কীর্তি তবে মৃত্যুর পরও কীর্তির মধ্য দিয়েই তিনি বেঁচে থাকেন মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়।

মূলভাব: মানুষকে তার কর্মের মধ্য দিয়ে গতিচঞ্চল জীবনের অধিকারী হয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হয়। নিষ্কর্মা ও অথর্ব মানুষ মৃততুল্য । সম্প্রসারিত ভাব: মানুষকে তার নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য কাজ করে যেতে হয়। স্বাধীন চিন্তা ও কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষকে এগিয়ে যেতে হয় সামনের পানে। মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব, তার যে ক্ষমতা আছে, কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষকে তা প্রমাণ করতে হয়। মানুষের হাত কর্মীর হাত।

মানুষ কেবল খেতে পরতে এবং বংশবৃদ্ধি করতে পৃথিবীতে আসেনি। তার ওপর রয়েছে অনেক দায়-দায়িত্ব। এ দায়- দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে না পারলে তাকে জীবনযুদ্ধে পরাজয়ের গ্লানি গায়ে মেখে বিপন্ন জীবনযাপন করতে হয়। সাফল্যলাভের পথে আলস্য এক বাধা। আলস্য যেন কোনোভাবেই মানুষকে পেয়ে না বসে। কারণ এ আলস্য মানুষের জন্যে সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

শ্রম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে জীবনের জন্য সঞ্চয় করতে হবে মানুষকে। কর্মহীন জীবন স্থবির, স্থবিরতা মৃত্যুর অন্য নাম। অকর্মণ্য জীবনযাপন আসলে জীবন্বৃত থাকার নামান্তর। জীবনের লক্ষণ প্রকাশ পায় কর্মের মহোৎসবে যোগদানের মধ্য দিয়ে। সফল কর্মময় জীবনের অধিকারী যে মানুষ, মৃত্যুর পরও পৃথিবী তাকে মনে রাখে। কর্মের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকাই হচ্ছে প্রকৃত বেঁচে থাকা। সবসময়ই মানুষকে মানবকল্যাণের কথা ভাবতে হবে এবং সেজন্য তাকে কাজ করেও যেতে হবে। সংক্ষিপ্ত জীবন পরিসরে আলস্যকে আমল দিয়ে বসে থাকার অর্থ জীবনযুদ্ধে পরাজিত হওয়া। কাজ, কাজ আর কাজের মধ্য দিয়েই জীবনকে ফুলে- ফলে বিকশিত করে তোলা যায়। মন্তব্য: কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনে যে গতি আসে, সে গতিই জীবনের ধর্ম । অলস কিংবা অকর্মণ্য জীবনযাপন মৃত্যুরই নামান্তর।

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে। (গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ)

মূলভাব: দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের পথিকৃৎ আজকের শিশু। প্রতিটি শিশুর অন্তরেই অপার সম্ভাবনায় অন্তর্নিহিত রয়েছে জাতীয় নেতৃত্ব। তাই শিশুর যথোপযুক্ত বিকাশের ওপর নির্ভর করে জাতির ভবিষ্যৎ। সম্প্রসারিত ভাব: শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। শিশু একদিন বড় হয়ে জাতীয় জীবনে বৃহৎ দায়িত্ব পালন করবে। আজকের শিশুই আগামী দিনের জাতির ভার বহন করবে। প্রতিটি শিশুর ভেতরেই সেই স্পৃহা জাগিয়ে তোলার জন্য সকলকে গুরুত্বের সাথে সচেতন হতে হবে।

শিশুকে উপলব্ধি করাতে হবে তার ভেতরকার সুপ্ত প্রতিভাই একদিন দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে। শিশু যদি অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ পায়, তবে সে সুশিক্ষিত ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। শিশু আদর্শ নাগরিক হয়ে জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেবে, বিশ্বের দরবারে দেশ ও জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। ইংরেজ কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ যথার্থই বলেছেন— ‘শিশুরাই জাতির পিতা।’ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে উপযুক্ত পরিবেশ, মানসম্মত শিক্ষা; সামাজিক সুবিধা ও নিরাপত্তার অভাবে অনেক শিশুর ভবিষ্যৎ অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা জাতির অগ্রগতির পথে মারাত্মক বাধাস্বরূপ। আমরা যদি বিশ্বসভায় নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাই তবে আজকের শিশুকে আগামী দিনের জাতির পিতা হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে সচেতনভাবে। প্রত্যেক শিশুর অন্তরের পিতাকে যথার্থই জাগিয়ে তুলতে হবে।

মন্তব্য: শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ পিতা। তাই বর্তমান শিশুর জীবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সে গুরুত্বের কথা চিন্তা করে শিশুদের যথাযোগ্য পরিচর্যা করতে হবে।

চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। বা, চরিত্র মানবজীবনের মুকুটস্বরূপ। বা, চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান। (গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ)

মূলভাব: চরিত্র মানবজীবনের মুকুটস্বরূপ। চরিত্রহীন ব্যক্তি পশুর সমান। যার চরিত্র নেই, পৃথিবীতে তার কোনো মান-মর্যাদাও নেই। সম্প্রসারিত ভাব: চরিত্র মানবজীবনের সুষমাময় সম্পদ। চরিত্রবান ব্যক্তি স্বকীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের গুণে সমাজজীবনে শ্রদ্ধাভাজন ও সমাদৃত হয়ে থাকেন। চরিত্র মানুষকে সুশোভিত করে। মানুষ তার মৌলিক সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় ও মধুময় করতে যেমন সুন্দর সুন্দর পোশাক পরিধান করে, তেমনই চরিত্র অলংকার হিসেবে মানুষের মধ্যে অনুপম সৌন্দর্যের বিকাশসাধন করে। মানবজীবনের অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে স্বাস্থ্য, অর্থ এবং বিদ্যা।

তবে জীবনে এগুলোর যতই অবদান থাকুক না কেন, এককভাবে এগুলোর কোনোটিই মানুষকে সর্বোত্তম মানুষে পরিণত করতে সক্ষম নয়। যার পরশে জীবন ঐশ্বর্যমণ্ডিত হয় এবং যার বদৌলতে মানুষ সমাজজীবনে শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র হিসেবে আদৃত হয়ে থাকে তাই চরিত্র। নামমাত্র নৈতিকতা বা ন্যায়নিষ্ঠাই চরিত্র নয়। চরিত্রের মাঝে সমন্বয় ঘটাতে হবে মানুষের যাবতীয় মানবীয় গুণাবলি ও আদর্শের। চরিত্রবান ব্যক্তি জাগতিক মায়া-মোহ ও লোভ-লালসার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনকে ছিন্ন করে লাভ করে থাকেন অপরিসীম শ্রদ্ধা ও অফুরন্ত সম্মান। বিখ্যাত ইংরেজ লেখক স্যামুয়েল স্মাইলাম তাঁর ‘CHARACTER’ নিবন্ধে বলেছেন- ‘The M crown and glory of life is character.’ তিনি উক্তিটির মাধ্যমে মূলত সেই অমূল্য সম্পদের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। মন্তব্য: চরিত্রের কাছে পার্থিব সম্পদ ও বিত্ত, অতি নগণ্য।

আরো পড়ুনঃ গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ সাজেশন দ্বিতীয় পর্ব

Leave a Comment