হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলেই খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই রেডিও থেরাপি দিতে কত টাকা লাগে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে রেডিও থেরাপি দিতে কত টাকা লাগে সম্পর্কে বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক।
রেডিও থেরাপি দিতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশে রেডিওথেরাপি খরচ বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে রোগীর ক্যান্সারের ধরন, ক্যান্সারের অবস্থান, চিকিৎসার পরিমাণ এবং হাসপাতালের অবস্থানের উপর নির্ভর করে।
সাধারণত, বাংলাদেশে রেডিওথেরাপির প্রতি দফা খরচ দুই শ টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই খরচ আরও বেশি হতে পারে।
সরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপির খরচ তুলনামূলক কম। জাতীয় ক্যানসার হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেডিওথেরাপির প্রতি দফা খরচ দুই শ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বেসরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপির খরচ বেশি। এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ল্যাবএইড হাসপাতাল এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে রেডিওথেরাপির প্রতি দফা খরচ পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত।
রেডিওথেরাপির খরচ কমানোর জন্য সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- সরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপির খরচ কমানো।
- রেডিওথেরাপির জন্য সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা।
- বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে রেডিওথেরাপির খরচ কমাতে উৎসাহিত করা।
এই পদক্ষেপগুলির ফলে বাংলাদেশে রেডিওথেরাপির খরচ কিছুটা কমেছে। তবে, এখনও এই খরচ অনেকের জন্য সাশ্রয়ী নয়।
রেডিও থেরাপি কত প্রকার
রেডিওথেরাপি প্রয়োগের পদ্ধতি অনুসারে রেডিওথেরাপিকে প্রধানত দুইভাবে ভাগ করা যায়—
- টেলিথেরাপি বা এক্সটার্নাল রেডিওথেরাপি
- ব্রাকিথেরাপি বা ইন্টার্নাল রেডিওথেরাপি
টেলিথেরাপি বা এক্সটার্নাল রেডিওথেরাপি
টেলিথেরাপিতে রেডিওথেরাপির উৎস রোগীর শরীর থেকে দূরে থাকে। সাধারণত এটি একটি মেশিনের মাধ্যমে করা হয়। এই মেশিনটি থেকে উচ্চ শক্তির বিকিরণ নির্গত হয়। এই বিকিরণটি রোগীর শরীরের টিউমারের উপর প্রয়োগ করা হয়।
টেলিথেরাপির বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ ধরনের টেলিথেরাপি হল:
- কনফর্ম্যাল রেডিওথেরাপি: এই ধরনের টেলিথেরাপিতে রেডিওথেরাপির ফোকাস টিউমারের উপর কেন্দ্রীভূত করা হয়। ফলে টিউমারের চারপাশের সুস্থ কোষগুলিতে কম ক্ষতি হয়।
- আইমেটেড রেডিওথেরাপি: এই ধরনের টেলিথেরাপিতে রেডিওথেরাপির ফোকাস টিউমারের উপর সরাসরি প্রয়োগ করা হয়। ফলে টিউমারের উপর বেশি ক্ষতি হয়।
- ব্রেইন রেডিওথেরাপি: এই ধরনের টেলিথেরাপিতে মস্তিষ্কের টিউমারের চিকিৎসা করা হয়।
- ব্রেস্ট রেডিওথেরাপি: এই ধরনের টেলিথেরাপিতে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়।
ব্রাকিথেরাপি বা ইন্টার্নাল রেডিওথেরাপি
ব্রাকিথেরাপিতে রেডিওথেরাপির উৎস রোগীর শরীরের ভিতরে থাকে। সাধারণত এটি একটি সূক্ষ্ম টিউবের মাধ্যমে করা হয়। এই টিউবটি টিউমারের কাছাকাছি বা টিউমারের ভিতরে স্থাপন করা হয়। এরপর টিউবের মাধ্যমে রেডিওথেরাপির উৎস টিউমারের কাছে নিয়ে আসা হয়।
ব্রাকিথেরাপির বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ ধরনের ব্রাকিথেরাপি হল:
- অর্গান-প্লাস-টিউমার (OTP) রেডিওথেরাপি: এই ধরনের ব্রাকিথেরাপিতে টিউমারের সাথে সংযুক্ত অঙ্গগুলিকে রক্ষা করার জন্য একটি বিশেষ ধরনের রেডিওথেরাপির উৎস ব্যবহার করা হয়।
- রেডিওইসোটোপ থেরাপি: এই ধরনের ব্রাকিথেরাপিতে একটি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়। এই আইসোটোপটি টিউমারের কোষগুলিকে ধ্বংস করে।
- ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য ব্রাকিথেরাপি: এই ধরনের ব্রাকিথেরাপিতে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়।
রেডিওথেরাপির ধরন রোগীর ক্যান্সারের ধরন, ক্যান্সারের অবস্থান এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে।
রেডিও থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
রেডিওথেরাপি একটি কার্যকর ক্যান্সার চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে, এই চিকিৎসার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি টিউমারের অবস্থান, রেডিওথেরাপির মাত্রা এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে।
রেডিওথেরাপির সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি হল:
- ত্বকের ক্ষতি: রেডিওথেরাপির ফলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। এই ক্ষতি ত্বকের লালভাব, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়া এবং ত্বকের সংক্রমণ হিসাবে প্রকাশ পেতে পারে।
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: রেডিওথেরাপির ফলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া এবং খাওয়ায় অরুচি হিসাবে প্রকাশ পেতে পারে।
- মিউকোসাইটিস: রেডিওথেরাপির ফলে মিউকোসাইটিস হতে পারে। এই অবস্থায় মুখ, গলা, খাদ্যনালী এবং মলদ্বারের মিউকোসা (শ্লেষ্মাঝিল্লি) প্রদাহিত হয়। এর ফলে মুখের ঘা, গলা ব্যথা, খাওয়ায় অসুবিধা এবং মুখ দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।
- হেমাটোলজিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: রেডিওথেরাপির ফলে হেমাটোলজিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে রয়েছে রক্তের কোষের সংখ্যা হ্রাস, যা দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
- নিউরোলজিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: রেডিওথেরাপির ফলে নিউরোলজিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মনোযোগের অভাব এবং ক্লান্তি।
- অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: রেডিওথেরাপির ফলে অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে রয়েছে গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি, বন্ধ্যাত্ব এবং যৌনতার সমস্যা।
রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি সাধারণত চিকিৎসার পরে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে চলে যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি কমাতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- চিকিৎসা দলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করা।
- রেডিওথেরাপির সময় এবং পরে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পান করা।
- ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা।
- ত্বককে রক্ষা করা।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা।
রেডিও থেরাপি কতদিন দিতে হয়
রেডিও থেরাপি কত দিন দিতে হবে তা ক্যান্সারের ধরন, ক্যান্সারের অবস্থান এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, রেডিও থেরাপি 5 থেকে 7 সপ্তাহ পর্যন্ত দেওয়া হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই সময়কাল আরও বেশি বা কম হতে পারে।
রেডিও থেরাপির সময়কাল নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়:
- ক্যান্সারের ধরন: কিছু ক্যান্সার, যেমন স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার, সাধারণত 5 থেকে 7 সপ্তাহের জন্য রেডিও থেরাপির প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, অন্যান্য ক্যান্সার, যেমন ব্রেন টিউমার এবং লিউকেমিয়া, সাধারণত আরও বেশি সময়ের জন্য রেডিও থেরাপির প্রয়োজন হয়।
- ক্যান্সারের অবস্থান: ক্যান্সার শরীরের যে অংশে অবস্থিত তার উপরও রেডিও থেরাপির সময়কাল নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, মুখের ক্যান্সারের জন্য রেডিও থেরাপির সময়কাল সাধারণত অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় কম হয়।
- রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য: রোগীর বয়স, সাধারণ স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য চিকিৎসার অবস্থানগুলিও রেডিও থেরাপির সময়কাল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রেডিও থেরাপির সময়কাল সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসা দলের সাথে পরামর্শ করুন।
কম খরচে রেডিওথেরাপি
বাংলাদেশে কম খরচে রেডিওথেরাপি পাওয়া যায়। সরকারি হাসপাতালগুলিতে রেডিওথেরাপির খরচ তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়াও, কিছু বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্যান্সার সোসাইটিগুলিও কম খরচে রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা করে।
বাংলাদেশে কম খরচে রেডিওথেরাপি পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত বিকল্পগুলি বিবেচনা করা যেতে পারে:
- সরকারি হাসপাতাল: জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলিতে রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে। এই হাসপাতালগুলিতে রেডিওথেরাপির খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
- বেসরকারি হাসপাতাল: কিছু বেসরকারি হাসপাতাল কম খরচে রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা করে। এই হাসপাতালগুলির মধ্যে রয়েছে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, ল্যাবএইড হাসপাতাল এবং অন্যান্য।
- ক্যান্সার সোসাইটি: বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ক্যান্সার সোসাইটি রয়েছে। এই সোসাইটিগুলিও কম খরচে রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা করে। এই সোসাইটিগুলির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বাংলাদেশ ক্যান্সার গবেষণা ও ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য।
কম খরচে রেডিওথেরাপি পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:
- চিকিৎসা দলের সাথে পরামর্শ করুন: কম খরচে রেডিওথেরাপির জন্য আপনার চিকিৎসা দলের সাথে পরামর্শ করুন। তারা আপনাকে আপনার অবস্থার জন্য উপযুক্ত এবং সাশ্রয়ী মূল্যের চিকিৎসার বিকল্পগুলি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে।
- অনলাইনে অনুসন্ধান করুন: অনলাইনে অনুসন্ধান করে আপনি কম খরচে রেডিওথেরাপির জন্য বিভিন্ন বিকল্প সম্পর্কে জানতে পারেন।
- অন্যান্য রোগীদের সাথে যোগাযোগ করুন: অন্যান্য ক্যান্সার রোগীদের সাথে যোগাযোগ করে আপনি তাদের কাছ থেকে কম খরচে রেডিওথেরাপি পাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারেন।
রেডিও থেরাপি কোথায় দেওয়া হয়
রেডিওথেরাপি সাধারণত হাসপাতালে দেওয়া হয়। রেডিওথেরাপির জন্য দুটি প্রধান ক্লিনিকাল সেটিং রয়েছে:
-
টেলিথেরাপি: টেলিথেরাপিতে, রেডিয়েশন একটি মেশিন থেকে আসে যা রোগীর শরীরের বাইরে থাকে। মেশিনটি টিউমারের উপর বিকিরণ নিক্ষেপ করে।
-
ব্রাকিথেরাপি: ব্রাকিথেরাপিতে, রেডিয়েশনের উৎস রোগীর শরীরের ভিতরে থাকে। উৎসটি সাধারণত একটি সূক্ষ্ম টিউবের মাধ্যমে টিউমারের কাছাকাছি বা টিউমারের ভিতরে স্থাপন করা হয়।
রেডিওথেরাপির জন্য অন্যান্য ক্লিনিকাল সেটিংগুলির মধ্যে রয়েছে:
- ক্যান্সার ক্লিনিক: ক্যান্সার ক্লিনিকগুলি ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত। এগুলি সাধারণত হাসপাতালে বা ডায়াগনস্টিক কেন্দ্রে অবস্থিত।
- আউটপেশেন্ট ক্লিনিকে: আউটপেশেন্ট ক্লিনিকে রোগীরা দিনের বেলা চিকিৎসার জন্য আসেন এবং রাতে বাড়ি যান।
- ক্যাথোড্রাম: ক্যাথোড্রাম হল একটি বিশেষ কক্ষ যাতে রোগীরা ক্যাথেটারের মাধ্যমে থেরাপি পান।