পাকিস্তান এর রাজধানী
পাকিস্তান এর রাজধানী হল ইসলামাবাদ। এটি পাকিস্তানের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ১৯৬৭ সালে এটিকে পাকিস্তান এর রাজধানী হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। ইসলামাবাদ একটি পরিকল্পিত শহর এবং এটি একটি আধুনিক শহর। এটিতে অনেক সরকারী ভবন, মসজিদ, জাদুঘর এবং অন্যান্য আকর্ষণ রয়েছে।
পাকিস্তানের পূর্ব নাম কি ছিল
পাকিস্তানের পূর্ব নাম ছিল পূর্ববঙ্গ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫৫ সালে পূর্ববঙ্গের নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান রাখা হয়। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
তাহলে, উত্তর হল: পূর্ববঙ্গ।
পাকিস্তানের বৃহত্তম জেলা কোনটি
পাকিস্তানের বৃহত্তম জেলা হল চাগাই জেলা। এটি পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। এর আয়তন ১৪,৮৫০ বর্গ কিলোমিটার। চাগাই জেলার উত্তরে আফগানিস্তান, পূর্বে খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশ, দক্ষিণে কুয়েটা বিভাগ এবং পশ্চিমে বালুচিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বতমালা অবস্থিত।
চাগাই জেলা একটি দুর্গম এবং বিচ্ছিন্ন অঞ্চল। এটি পাহাড়, উপত্যকা এবং নদী দ্বারা আবৃত। জেলার প্রধান শহর হল দালবাদিন। চাগাই জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৯৩,০০০। এর অধিকাংশ মানুষ বেলুচি।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান কেন সৃষ্টি হয়
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রধান কারণ ছিল ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদ ছিল অত্যন্ত প্রকট। মুসলমানরা মনে করত যে হিন্দু-প্রধান ভারতে তারা সংখ্যালঘু হিসেবে তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষা করতে পারবে না। তাই তারা একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তিনি ছিলেন একজন উজ্জ্বল আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ। তিনি দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন, যা অনুসারে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমান এবং হিন্দুরা দুটি ভিন্ন জাতি। জিন্নাহর মতে, মুসলমানদের একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল যেখানে তারা তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যার দুই অংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তান।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্মীয় বিভেদকে আরও তীব্র করে তুলেছিল এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে।
পাকিস্তান কি পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল
হ্যাঁ, পাকিস্তানের কিছু অংশ পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে পারস্যের রাজা সাইরাস দ্য গ্রেট ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশ জয় করেন। এই জয়ের ফলে বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ এবং বেলুচিস্তান প্রদেশের কিছু অংশ পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
পারস্য সাম্রাজ্যের শাসনামলে সিন্ধু প্রদেশে পারসিয় সংস্কৃতি ও ধর্ম প্রসার লাভ করে। এছাড়াও, পারস্য সাম্রাজ্য সিন্ধু নদীর অববাহিকায় বাণিজ্য ও যোগাযোগের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে পারস্য সাম্রাজ্য ভেঙে পড়লে, সিন্ধু প্রদেশ ও বেলুচিস্তান প্রদেশের কিছু অংশ স্বাধীন রাজ্য বা সাম্রাজ্যগুলির অধীনে চলে যায়। তবে, পরবর্তীতে এই অঞ্চলগুলি আবারও বিভিন্ন সময়ে পারস্য, গ্রীক, আরব, মুসলিম এবং ব্রিটিশদের দ্বারা শাসিত হয়।
সুতরাং, পাকিস্তানের কিছু অংশ পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে বলা যায়। তবে, এই অন্তর্ভুক্তি ছিল অস্থায়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী ছিল না।
পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নবাবজাদা লিয়াকত আলি খান। তিনি ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত মুসলিম রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং নিখিল ভারত মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে তিনি রাজনীতিতে উঠে আসেন।
লিয়াকত আলি খান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান কারিগর ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করেন। তিনি ১৯৫১ সালে এক জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।
লিয়াকত আলি খান পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের স্বাধীনতা এবং উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
পাকিস্তানের মানুষের মাথাপিছু আয় কত?
২০২৩ সালের হিসাবে, পাকিস্তানের মানুষের মাথাপিছু আয় ১,৫৬১ মার্কিন ডলার। এটি নামমাত্র জিডিপি অনুযায়ী। পিপিপি জিডিপি অনুযায়ী, পাকিস্তানের মানুষের মাথাপিছু আয় ৫,০১০ মার্কিন ডলার।
পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় তুলনামূলকভাবে কম। বিশ্বব্যাংক অনুসারে, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বিশ্বের ১৬১তম।
পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় কম হওয়ার কারণগুলি হল:
- নিম্ন উৎপাদনশীলতা: পাকিস্তানের শিল্প ও কৃষি উৎপাদনশীলতা তুলনামূলকভাবে কম।
- বৈষম্য: পাকিস্তানে বৈষম্য একটি বড় সমস্যা। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে পার্থক্য খুবই বেশি।
- অস্থিরতা: পাকিস্তানে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা একটি নিয়মিত ঘটনা। এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।
পাকিস্তান সরকার মাথাপিছু আয় বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: সরকার শিল্প ও কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
- বৈষম্য হ্রাস: সরকার বৈষম্য হ্রাসের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
- অস্থিরতা হ্রাস: সরকার রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা হ্রাসের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয় কেন
বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে। এই যুদ্ধের মূল কারণ ছিল বাংলা ভাষার অধিকার, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সাংস্কৃতিক বৈষম্য।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জনগণ তাদের ভাষার অধিকারের জন্য আন্দোলন করে আসছিল। পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলত, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ছিল উর্দু। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ চাইত যে রাষ্ট্রভাষা বাংলা হোক।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষার অধিকারের জন্য ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ হয়। এই বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে অনেক মানুষ নিহত হয়। এই ঘটনাটি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের অধিকারের জন্য আরও বেশি সোচ্চার হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার আওয়ামী লীগের দাবি মেনে নেয়নি।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।