হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলেই খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই এশার নামাজ কয় রাকাত সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে এশার নামাজ কয় রাকাত সম্পর্কে বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক।
এশার নামাজ কয় রাকাত
এশার নামাজের ফরজ অংশ ৪ রাকাত। এছাড়াও, এশার নামাজের পূর্বে ৪ রাকাত সুন্নাহ এবং ফরজের পরে ২ রাকাত সুন্নাহ এবং ২ রাকাত নফল পড়া উত্তম।
সুতরাং, মোট এশার নামাজের রাকাআত সংখ্যা হলো ১২। তবে, এশার নামাজের ফরজ অংশ ৪ রাকাত আবশ্যক। অন্যগুলো ঐচ্ছিক।
এশার নামাজের ফরজ অংশের পর ২ রাকাত সুন্নাহ নামাজ পড়া মুস্তাহাব। এই সুন্নাহ নামাজকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলা হয়। অর্থাৎ, এটি পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এশার নামাজের পর ২ রাকাত নফল নামাজ পড়া উত্তম। এই নফল নামাজকে বিতর নামাজ বলা হয়।
এশার নামাজের সময় হলো মাগরিবের নামাজের পর থেকে রাতের তিনের এক ভাগ সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। তবে, রাতের দুই তৃতীয়াংশ জায়েজ এবং সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত পড়া মাকরুহ অনুত্তম।
এশার নামাজের সময়
এশার নামাজের সময়
এশার নামাজের সময় হলো সূর্যাস্তের পর থেকে চাঁদ ওঠার পূর্ব পর্যন্ত। তবে, অধিকাংশ আলেমদের মতে, সূর্যাস্তের পর থেকেই এশার নামাজ পড়া সুন্নত।
এশার নামাজের ফজিলত
এশার নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ফজিলত হলো:
- এশার নামাজ পড়লে আল্লাহ তা’আলা বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন।
- এশার নামাজ পড়লে বান্দার রিজিক বৃদ্ধি পায়।
- এশার নামাজ পড়লে বান্দার হায়াত দীর্ঘ হয়।
- এশার নামাজ পড়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে।
এশার নামাজের নিয়ম
এশার নামাজ চার রাকাআত। প্রথম রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা পড়া হয়। দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা পড়া হয়। তৃতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা পড়া হয়। চতুর্থ রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর শুধুমাত্র তাশাহুদ পড়া হয়।
এশার নামাজের নিয়ত
আরবি:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিল ঈশায়ি ফারজুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ:
আমি আল্লাহর দরবারে নিয়ত করছি, যে আমি আল্লাহর জন্য চার রাকাআত ফরজ এশার নামাজ আদায় করছি, কেবলার দিকে মুখ করে। আল্লাহু আকবার।
বাংলা:
আমি আল্লাহর দরবারে নিয়ত করছি, যে আমি আল্লাহর জন্য চার রাকাআত ফরজ এশার নামাজ আদায় করছি, কেবলার দিকে মুখ করে। আল্লাহু আকবার।
এশার নামাজের শেষ সময়
এশার নামাজের নিয়ত
আরবি:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিল ঈশায়ি ফারজুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ:
আমি আল্লাহর দরবারে নিয়ত করছি, যে আমি আল্লাহর জন্য চার রাকাআত ফরজ এশার নামাজ আদায় করছি, কেবলার দিকে মুখ করে। আল্লাহু আকবার।
বাংলা:
আমি আল্লাহর দরবারে নিয়ত করছি, যে আমি আল্লাহর জন্য চার রাকাআত ফরজ এশার নামাজ আদায় করছি, কেবলার দিকে মুখ করে। আল্লাহু আকবার।
এশার নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বা মনে মনে করা যায়। মুখে উচ্চারণ করলে আরবিতে নিয়ত করা উত্তম। বাংলায়ও নিয়ত করা যাবে।
এশার নামাজের নিয়ত করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত:
- নামাজের নাম “সালাতুল ঈশাই”।
- নামাজের সংখ্যা “চার রাকাআত”।
- নামাজের ফরজ “ফরজ”।
- নামাজের দিক “কেবলার দিকে”।
- নামাজের শুরুতে “আল্লাহু আকবার” বলা।
এশার নামাজের নিয়ত সঠিকভাবে করার মাধ্যমে নামাজের সওয়াব বৃদ্ধি পায়।
এশার নামাজ কয় রাকাত সুন্নত কয় রাকাত ফরজ
এশার নামাজের ফরজ ৪ রাকাআত। এর আগে ৪ রাকাআত সুন্নত পড়া হয়। তবে, এশার নামাজের আগের সুন্নত পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, অর্থাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজের আগের সুন্নত নামাজ কখনো ছাড়েননি।
তাই, এশার নামাজ আদায় করার সময় ফরজের আগে সুন্নত পড়া উত্তম। তবে, কোনো কারণে যদি ফরজের আগে সুন্নত না পড়া হয়, তাহলে পরেও পড়া যাবে। তবে, ফরজের আগে সুন্নত না পড়লে ফরজের সওয়াব কম হবে।
এশার নামাজের সুন্নতের নিয়ত হলো:
আরবি:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিন সুন্নাতিল ঈশায়ি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ:
আমি আল্লাহর দরবারে নিয়ত করছি, যে আমি আল্লাহর জন্য চার রাকাআত সুন্নত এশার নামাজ আদায় করছি, কেবলার দিকে মুখ করে। আল্লাহু আকবার।
বাংলা:
আমি আল্লাহর দরবারে নিয়ত করছি, যে আমি আল্লাহর জন্য চার রাকাআত সুন্নত এশার নামাজ আদায় করছি, কেবলার দিকে মুখ করে। আল্লাহু আকবার।
এশার নামাজের সুন্নতের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বা মনে মনে করা যায়। মুখে উচ্চারণ করলে আরবিতে নিয়ত করা উত্তম। বাংলায়ও নিয়ত করা যাবে।
এশার নামাজের পর আমল
এশার নামাজের পর অনেকগুলো আমল করা যায়। এর মধ্যে কিছু আমল হলো:
- আয়াতুল কুরসি পড়া: এশার নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে।” (তিরমিজি, নাসাঈ)
- দুরুদ শরিফ পড়া: এশার নামাজের পর দুরুদ শরিফ পড়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে দশবার দুরুদ শরিফ পড়বে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে একটি পতাকা উড়বে, যার উপরে লেখা থাকবে, এই ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বান্দা।” (তিরমিজি)
- তাওবা-ইস্তেগফার করা: এশার নামাজের পর তাওবা-ইস্তেগফার করা খুবই জরুরি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক রাতে দুনিয়াতে নেমে আসেন এবং এশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত বলেন, হে বান্দাগণ! তোমরা আমার কাছে তোমরা যা চাও চাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করব।” (তিরমিজি)
- আল্লাহর কাছে দোয়া করা: এশার নামাজের পর আল্লাহর কাছে দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এশার নামাজের পরের দোয়াগুলো খুবই কবুল হয়।
এছাড়াও, এশার নামাজের পর কুরআন তিলাওয়াত করা, তাসবিহ, তাহলিল, তাহমীদ পাঠ করা, মসজিদে বসে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা, ভালো ভালো কথা বলা ইত্যাদি আমল করা যেতে পারে।
এশার নামাজের পরের আমলগুলোর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং আমাদের জীবনকে সুন্দর ও কল্যাণময় করে তুলতে পারি।
উপসংহার
আমি আশা করছি আপনারা আপনাদের এশার নামাজ কয় রাকাত এই প্রশ্নের উওর পেয়েছেন। আরো কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ মাগরিবের নামাজের সময়
–