হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলেই খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের খরচ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের খরচ সম্পর্কে বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের খরচ
বাংলাদেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের খরচ প্রতিষ্ঠানভেদে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত, প্লে গ্রুপ থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য প্রতি বছর শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম ২ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়।
প্লে গ্রুপের জন্য স্কুল ভেদে খরচের পরিমাণ সাধারণত ১ থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে থাকে। কেজি ওয়ান থেকে কেজি থ্রি পর্যন্ত খরচের পরিমাণ সাধারণত ২ থেকে ৩ লাখ টাকার মধ্যে থাকে। প্রি-প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত খরচের পরিমাণ সাধারণত ৩ থেকে ৪০ লাখ টাকার মধ্যে থাকে।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের খরচের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে:
- টিউশন ফি: টিউশন ফি হল শিক্ষার মূল খরচ। এটি শিক্ষার্থীর শ্রেণী, স্কুলের অবস্থান, স্কুলের সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
- ভর্তি ফি: ভর্তি ফি হল এককালীন খরচ। এটি সাধারণত ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে থাকে।
- বই ও স্টেশনারি ফি: বই ও স্টেশনারি ফি প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়। এটি সাধারণত ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে থাকে।
- পরীক্ষার ফি: পরীক্ষার ফি প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়। এটি সাধারণত ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে থাকে।
- অন্যান্য ফি: অন্যান্য ফির মধ্যে রয়েছে স্কুল ইউনিফর্ম, স্কুল বাস, ক্যাম্পাস সুরক্ষা ইত্যাদির খরচ। এটি প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ানোর জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও, এ ধরনের স্কুলে আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ও সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন। এসব কারণে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।
বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল কয়টি
২০২৪ সালের ৩রা জানুয়ারি পর্যন্ত, বাংলাদেশে নিবন্ধিত ও সাময়িক নিবন্ধিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা ১১৫। এর মধ্যে ঢাকায় ৭০টি, চট্টগ্রামে ১৪টি, রাজশাহীতে ১০টি, খুলনায় ৫টি, সিলেটে ৪টি, বরিশালে ৩টি, রংপুরে ২টি এবং অন্যান্য জেলায় ৬টি।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি
ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়:
১. স্কুল নির্বাচন
ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে প্রথমেই আপনাকে একটি ভালো স্কুল নির্বাচন করতে হবে। স্কুল নির্বাচনের সময় আপনাকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:
- স্কুলের অবস্থান
- স্কুলের শিক্ষাক্রম
- স্কুলের সুযোগ-সুবিধা
- স্কুলের শিক্ষকদের যোগ্যতা
- স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাফল্য
২. আবেদন
স্কুল নির্বাচনের পর আপনাকে স্কুলের নির্ধারিত আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। আবেদনপত্র পূরণের সময় আপনাকে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিবারিক তথ্য, এবং অন্যান্য তথ্য প্রদান করতে হবে।
৩. ভর্তি পরীক্ষা
কিছু স্কুল ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে। ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, এবং গণিত থেকে প্রশ্ন করা হয়।
৪. মেধাতালিকা
ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি মেধাতালিকা প্রণয়ন করে। মেধাতালিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়।
৫. ভর্তি ফি প্রদান
মেধাতালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি প্রদান করতে হয়। ভর্তি ফি প্রদানের পর শিক্ষার্থীকে স্কুলে ভর্তি করা হয়।
ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীর বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বিবেচনা করা হয়। সাধারণত, প্লে গ্রুপ থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে, শিক্ষার্থীকে পূর্ববর্তী স্তরে উত্তীর্ণ হতে হবে। ইংরেজি ভাষার দক্ষতার ক্ষেত্রে, শিক্ষার্থীকে ইংরেজি ভাষায় কথা বলা, পড়া, এবং লেখা বাধ্যতামূলক।
ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে:
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতা: ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীকে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে। শিক্ষার্থীকে ইংরেজি ভাষায় কথা বলা, পড়া, এবং লেখা বাধ্যতামূলক।
- পড়াশোনার মান: ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনার মান তুলনামূলকভাবে বেশি। শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
- সমাজিকীকরণ: ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, এবং সংস্কৃতির শিক্ষার্থীদের সাথে মিশতে হয়। শিক্ষার্থীদের সমাজিকীকরণ এবং সহনশীলতা অর্জন করতে হবে।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সিলেবাস
বাংলাদেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সিলেবাস সাধারণত দুই ধরনের হয়:
- ব্রিটিশ কাউন্সিলের সিলেবাস: ব্রিটিশ কাউন্সিলের সিলেবাস হল বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি সিলেবাস। এই সিলেবাস অনুসরণ করে পড়াশোনা করলে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা পায়। বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সিলেবাস অনুসরণ করে পড়াশোনা করা স্কুলগুলোর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
- এডেক্সেলের সিলেবাস: এডেক্সেলের সিলেবাস হল আরেকটি স্বীকৃত সিলেবাস। এই সিলেবাস অনুসরণ করে পড়াশোনা করলে শিক্ষার্থীরা গবেষণা ও উদ্ভাবনমূলক দক্ষতা অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশে এডেক্সেলের সিলেবাস অনুসরণ করে পড়াশোনা করা স্কুলগুলোর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সিলেবাসে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে:
- বাংলা: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
- ইংরেজি: ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য
- গণিত: গণিত
- বিজ্ঞান: বিজ্ঞান
- সামাজিক বিজ্ঞান: সামাজিক বিজ্ঞান
- ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা: ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
- আইসিটি: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
- কলা: কলা
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সিলেবাসে প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করা হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতি বিষয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ নম্বর অর্জন করতে হয়। শিক্ষার্থীদের সাফল্য মূল্যায়ন করার জন্য স্কুলগুলো বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কারিকুলাম
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কারিকুলাম হল একটি পরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট শিক্ষাক্রম যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা, ও মূল্যবোধ অর্জনের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কারিকুলাম সাধারণত দুই ধরনের হয়:
- ব্রিটিশ কাউন্সিলের কারিকুলাম: ব্রিটিশ কাউন্সিলের কারিকুলাম হল বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি কারিকুলাম। এই কারিকুলাম অনুসরণ করে পড়াশোনা করলে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা পায়। বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কারিকুলাম অনুসরণ করে পড়াশোনা করা স্কুলগুলোর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
- এডেক্সেলের কারিকুলাম: এডেক্সেলের কারিকুলাম হল আরেকটি স্বীকৃত কারিকুলাম। এই কারিকুলাম অনুসরণ করে পড়াশোনা করলে শিক্ষার্থীরা গবেষণা ও উদ্ভাবনমূলক দক্ষতা অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশে এডেক্সেলের কারিকুলাম অনুসরণ করে পড়াশোনা করা স্কুলগুলোর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কারিকুলামের লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের:
- জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা
- মূল্যবোধ ও নৈতিকতা অর্জন করা
- সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতা অর্জন করা
- সমালোচনামূলক ও চিন্তাশীল দক্ষতা অর্জন করা
- সামাজিক ও নাগরিক দায়িত্ববোধ অর্জন করা
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কারিকুলামে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে:
- বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
- ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য
- গণিত
- বিজ্ঞান
- সামাজিক বিজ্ঞান
- ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
- আইসিটি
- কলা
ইংলিশ ভার্সন পড়ার সুবিধা
ইংলিশ ভার্সন পড়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল:
-
উন্নত ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জন: ইংলিশ ভার্সন পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষার দক্ষতা দ্রুত উন্নত করতে পারে। কারণ, এই ভার্সনে সমস্ত পাঠ্য, আলোচনা এবং কার্যক্রম ইংরেজি ভাষায় পরিচালিত হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষার শব্দভান্ডার, ব্যাকরণ এবং কথোপকথন দক্ষতা দ্রুত আয়ত্ত করতে পারে।
-
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা লাভ: ইংলিশ ভার্সন পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা লাভ করতে পারে। কারণ, এই ভার্সনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম অনুসরণ করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।
-
বিশ্বব্যাপী চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি: ইংলিশ ভার্সন পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিশ্বব্যাপী চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি পায়। কারণ, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ইংরেজি ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। ফলে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের চাহিদা বেশি।
-
উন্নত চিন্তাশীলতা এবং সমালোচনামূলক দক্ষতা বিকাশ: ইংলিশ ভার্সন পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উন্নত চিন্তাশীলতা এবং সমালোচনামূলক দক্ষতা বিকাশ হয়। কারণ, ইংরেজি ভার্সন পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে শিখে। ফলে তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এবং সমস্যা সমাধান করতে পারে।
-
স্বাধীনতা এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি: ইংলিশ ভার্সন পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। কারণ, এই ভার্সনে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার এবং সৃজনশীল কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে তারা তাদের নিজেদের ধারণা এবং দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে।
অবশ্য, ইংলিশ ভার্সন পড়ার কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল:
- শিক্ষার খরচ বেশি: ইংলিশ ভার্সন পড়ার খরচ সাধারণত বাংলা ভার্সন পড়ার তুলনায় বেশি হয়। কারণ, এই ভার্সনে ব্যবহৃত বই, পাঠ্যপুস্তক এবং অন্যান্য সরঞ্জামের মূল্য বেশি।
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন: ইংলিশ ভার্সন পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। কারণ, এই ভার্সনে সমস্ত পাঠ্য, আলোচনা এবং কার্যক্রম ইংরেজি ভাষায় পরিচালিত হয়।
- পরিশ্রমের প্রয়োজন: ইংলিশ ভার্সন পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বেশি পরিশ্রম করতে হয়। কারণ, এই ভার্সনে পাঠ্যক্রমের পরিমাণ বেশি এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয়।
উপসংহার
আমি আশা করছি আপনারা আপনাদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের খরচ এই প্রশ্নের উওর পেয়েছেন। আরো কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ কি সরকারি